শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Labels: ,

# কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব ৮ মাক্কা বনাম বাক্কা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম



কোরআনের আরেকটি ইন্টারেস্টিং ভাষাগত সৈন্দর্য বিষয়ে আজ দেখবো।

আপনি কি এই দুটো নাম আগে শুনেছেন মক্কা নগরী সর্ম্পকে মাক্কা এবং বাক্কা ?

এ দুটি নামই কোরআনে আছে, একবার আল্লাহ বলেন মাক্কা আরেক বার অন্য সুরায় বাক্কা নাম ব্যবহার করেন তবে চলুন দেখা যাক কেন দুটি নাম ব্যবহার করেছেন:

ঐতিহাসিক ভাবে বলতে গেলে এ দুটি নাম একটি শহরের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছে যাকে আমরা মক্কা বলে জানি। মাক্কা শহরের আরেকটি ডাক নাম হলো বাক্কা। বাক্কা নামটি এসেছে "বাক" بكك – Bakk হতে যা আরবি ক্রিয়া/ শব্দ/verb। এটা বোঝায় ঘনবসতিপূর্ণ/ভিড়/জনাকীর্ণ/মানুষে পরিপুর্ন ইত্যাদি।

আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর ব্যপার হলো যে আল্লাহ কোরআনে প্রতিটা শব্দ বিজ্ঞতা ও চমকপ্রদতার সাথে ব্যবহার করেছেন

এখন দেখুন যখন বাক্কা ব্যবহৃত হয়েছে কোরআনে সুরা আল ইমরানে যেখানে বাক শব্দটি আছে যা বোঝায় ঘনবসতিপূর্ণ/ভিড়/জনাকীর্ণ/মানুষে পরিপুর্ন আর আল্লাহ কোরআনে বাক্কা ব্যবহার করেছেন হজ্জের প্রসঙ্গে তিনি বলনে "ওয়া লিল্লাহি আলা-ন-নাসি হিজ্জু-ল-বায়াত" আর হজ্জ মানেই তো ঘনবসতিপূর্ণ/ভিড়/ও মানুষে পরিপুর্ন তাই এখানে কোন নামটা বেশি মানানসই হয় বাক বা বাক্কা তাই না? দেখুন:

إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ
নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় (বাংলা অনুবাদে মক্কায় বলা আছে হবে বাক্কা) অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। সুরা আল ইমরান সুরা নং ৩ আয়াত নং ৯৬

فِيهِ آيَاتٌ بَيِّـنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থø রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না। -----সুরা আল ইমরান সুরা নং ৩ আয়াত নং ৯৭

কিন্তু যখন আল্লাহ মাক্কা নাম ব্যবহার করেন তখন হজ্জ সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি শুধু মক্কা নগরী বিষয়ে বলেছেন দেখুন:

وَهُوَ الَّذِي كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُم بِبَطْنِ مَكَّةَ مِن بَعْدِ أَنْ أَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا --তিনি মক্কা শহরে তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে নিবারিত করেছেন তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন। --- সুরা আল ফাতাহ সুরা নং ৪৮ আয়াত নং ২৪

এবং كَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ --এমনি ভাবে আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। --৪২) সূরা আশ-শুরা আয়াত নং ৭

এই ক্ষুদ্র বিষয় যা আপনি ও আমি হলে বলতাম মাক্কা বা বাক্কা একই জিনিস একটি নাম বললেই হলো, একই অর্থ বহন করে। কিন্তু কোরআনের নির্ভুলত যথাযথতা ও স্পষ্টতার লেভেল অনেক উপরে যা অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনা হয় না। আমরা মানুষরা সেই লেভেলে চিন্তা করেতে পারি না আমরা সেই লেভেলের একুরেসি/ যথাযথতা মেইন্টেন করতে পারি না আমাদের স্বীমাবদ্ধতার কারনে।

একটি বিষয় যা আমরা কোরআন হতে শিখতে পারি যে আমাদের কি পরিমান কেয়ারফুল হতে হবে, কথা বলার সময় আমাদের কি পরিমান খেয়াল রাখতে হবে যাতে অবান্চিত ও খারাপ কথা বা ভুল কথা না বলি তাই না? আর যারা দেশের আসনে বসেন বা যারা আমাদের প্রতিনিধি তদের তো কথা বলার সময় আরো বেশি খেয়াল রাখতে হবে , কিন্তু আতিব দুঃখের সাথে বলতে হয় যে আমাদের প্রতিনিধিরা একটি ক্ষমতা পেলেই বেমালুম ভালে যান তাদের কথা শুনলে সাধারন জনগন তাদের মনে মনে গালি দিয়েই বসে। আরেক দল রয়েছে যারা জনগনকে ভুল বুঝিয়া ভুল কথা প্রচার করে তাদেরও কথার লাগাম না দেয়ার কারনে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হয়। তাদের জন্য একটি কথাই আল্লাহ আমাদের উপদেশ দেন "
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِين-----আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক।". -সুরা আরাফ সুরা নং , আয়াত.১৯৯

তাই আমাদের সবার উচিৎ আমাদের কথার লাগাম দেয়া এটাই মহানবীর সুন্নাহ এবং আল্লাহ শেখানো ম্যনার। কারন আল্লাহ খুবই সুক্ষ ভাবে সঠিক ভাবে যথাযথ ভাবে কথার ,শব্দের ও নামের প্রয়োগ করেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ও সরল পথে পরিচালিত করুন---আমিন।

0 comments
Labels: ,

আসুন মোনাজাত করি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে।

মোনাজাত অর্থ প্রার্থনা। আল্লাহর কাছে কিছু কামনা করা। আসুন, আমরা সবাই আমাদের অন্তরের শুদ্ধির জন্য, পাপ মোচনের জন্য, কল্যাণের জন্য, শয়তানের হাত থেকে বাঁচার জন্য মোনাজাত করি।


মোনাজাতের সুন্নাত তরীকা হচ্ছে, প্রথমে দরূদ শরীফ ও ইস্তেগফার পাঠ করা এবং দরূদ শরীফ দিয়েই মোনাজাত শেষ করা। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

"যতক্ষণ পর্যন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরূদ পড়া না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত দোআ'সমূহ আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে লটকিয়ে থাকে।"
[তিরমিযী]

তো আসুন, সবাই মিলে মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাত করি।

হযরত আদম (আ.) ৩০০ বছর নিম্নোক্ত মোনাজাতটি পড়ে আল্লাহ পাকের দরবারে কেঁদেছিলেন:
রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইললাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকূনান্না মিনাল খাসিরীন।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজের (দেহ ও আত্মার প্রতি) যুলুম করেছি যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গলের জন্য নিম্নোক্ত মোনাজাত করতে উপদেশ দিয়েছেন:
রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা আ'যাবান্নার।
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে ইহকালের মঙ্গল এবং পরকালের শান্তি দান করুন এবং আমাদেরকে দোযখের আগুন হতে রক্ষা করুন।

নিম্নের দোয়া পাঠ করলে সুদৃঢ় ঈমানের সাথে মৃত্যু নসীব হবে:
রাব্বানা লা তুযিগ কুলূবানা বা'দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাব লানা মিল্ লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! সঠিক সরল পথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তরকে বাঁকা করে দিবেন না এবং আপনার পক্ষ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহান দাতা।

নিচের দোয়াটি পাঠ করলে মাতা-পিতা ও মুমিনদের গুনাহসমূহ মাফ হয় এবং দোয়াকারীর আমলনামায় সকল মুমিনদের সংখ্যানুযায়ী সওয়াব লেখা হয়:
রাব্বিগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিল মু'মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকূমুল হিসাব।
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমার মা-বাবার এবং সকল মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিন, যে দিন হিসাব নিকাশ অনুষ্ঠিত হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা নিচের দোয়াটি পাঠ করতে বলতেন। এ দোয়াটি পাঠ করলে পাঠকারীর অন্তর দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকে এবং আল্লাহর মহব্বত অন্তরে বদ্ধমূল হয়:
আল্লাহুম্মা ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলূবি ছাব্বিত কুলূবানা আ'লা দ্বীনিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ! হে অন্তরসমূহ আবর্তনকারী! আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখুন।

আরো কয়েকটি দোয়া নিচে দেওয়া হলো যে গুলো নিয়মিত পাঠ করলে ঈমান মজবুত হয়, অন্তরে নূর পয়দা হয়, সকল দোষ-ত্রুটি আল্লাহপাক গোপন করে রাখেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যু নসীব হয় ও পরকালের কঠিন আযাব হতে মুক্তির কারণ হয়:

রাব্বানা ফাগফির লানা যুনূবানা ওয়া কাফফির আ'ন্না সাইয়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআ'ল আবরার।
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিন এবং আমাদের দোষ-ত্রুটি দূর করে দিন আর নেক লোকদের সাথে আমাদের মৃত্যু দান করুন।

রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফির লানা যুনূবানা ওয়াক্বিনা আ'যাবান্নার।
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি। অতএব, আমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিন এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব হতে রক্ষা করুন।

রাব্বিগফিরলী ওয়া তুব আ'লাইয়্যা ইন্নাকা আনতাত তাওয়্যাবুর রাহীম।
অর্থ: হে আমার পরওয়ারদেগার! আমার গুনাহ সমূহ মাফ করে দিন এবং আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তওবা কবুলকারী করুণাময়।

দোয়াগুলোর আরবি উচ্চারণ সহ বাংলা অর্থ দিয়ে দিলাম। বাংলা অর্থ বোল্ড করে দিলাম এই জন্য যে সবাই যেন বুঝতে পারেন কি চাইছেন মহান আল্লাহতায়ালার কাছে। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ, এখানকার জনগোষ্ঠির প্রায় ৮৬% মুসলমান। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ধর্মভীরু সুন্নী, কিন্তু সঠিক ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষার অভাবে কিছু মানুষ ধর্মকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে যাচ্ছে! আমরা যদি নিজেরা না জানি, না বুঝি তাহলে অন্যের ভুল ব্যাখ্যার ফাঁদে পা দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত হবো। আমাদের দেশে অনেকেই ইসলামকে অনেক ভাবে বর্ণনা দেন, ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু সকলের মত ও পথের চেয়ে মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মত ও পথ যে অতি উত্তম ও উত্কৃষ্ট মত ও পথ এ কথা কোন মুসলমানকে বলে দিতে হবে না। কাজেই অন্যান্য সকলের মত ও পথকে বর্জন করে মহানবীর মহাপবিত্র মত ও পথেই আমাদেরকে চলতে হবে। অন্য কারো মতে ও পথে চলার জন্য নির্দেশ নাই।

আপনি যদি নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবী করেন তাহলে নিজে ইসলাম জানুন, অন্যকে ইসলাম কি সেটা জানান। ইসলাম কে বলা হয় দ্বীন, মানে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কোন রকম বিভ্রান্তি বা অকল্যাণের স্থান নেই ইসলামে। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন, কেননা আল্লাহপাক আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদতে জন্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পথ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।।

লিখেছেন- ব্লগার মাগুর blog link: http://www.somewhereinblog.net/blog/faceofrubayet/

0 comments
Labels: , ,

কোরআন কি বিজ্ঞানে ভরপুর ? কোরান কি আজকে যুগে অচল?


বিজ্ঞানে ভরপুর না তবে বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে সুক্ষ আলোচনা রয়েছে যেমন ভ্রুন হতে মানুষ পাহাড় আকাশ সুর্য ইত্যাদি নিয়ে, তবে বিজ্ঞানের সাথে কন্টাডিক্টরি কিছু পাবেন না সেটা বলতে পারি সাহস করে।

Should we understand Qur’an through Modern Scientific Explanations?

The Qur’an is not speaking to us in scientific explanations, but through human experience – what the eye sees and perceives. So if we stay true to the language and how the Arabs would communicate to each other during the life of Allah’s Messenger – then we may be closer to the intended meaning of the Qur’ans understandings.

This general rule will remove all doubts against the Qur’an by atheists who might say that the Qur’an is scientifically incorrect. It isn’t. Rather, the Qur’an is explained for the masses, so it will describe what is clear/apparent to the human eye.

So yes, we are aware that the night is really due to a lack of sunlight (many early muslim scientists would even affirm such concepts, knowing well that the Qur’an is not in contradiction), but Allah will still describe it as a covering for us, since that is its role and it actually does look like that for the general masses of people throughout history.

This may be done to avoid wasteful dispute throughout history, and instead allow mankind to agree on what is fully apparent, so they should reflect and be grateful for that. Then, scientists can study these phenomenon further to see them from a purely scientific perspective.

This is an answer to those who might be in doubt as to how some verses can be interpreted scientifically. So in reality, they don’t have to be interpreted in such a manner.

And Allah knows best.

কোরান তাইলে ১৪০০ বছর আগের আরবের জন্য প্রযোজ্য, আজকে যুগে অচল ?
কোরআন তখনো উদাহরন দিয়েছে সাধারন মানুষের জন্য যাতে সবাই বুঝতে পারে এবং সেটা এখনো বিদ্যমান - আপনার আমার মত লেখা পড়া হয়তো সবাই করে নাই তাই বলে তাদের কিভাবে বোঝাবেন একটা তো উপায় থাকা চাই, তাদের জন্যই সহজ বর্ননা আর আপনাদের মত বিজ্ঞদের জন্যও রয়েছে বর্ননা তাই আপনাদের মত বিজ্ঞ জনের জন্য কোরান এমন কিসু নাই যা তত্কালীন পৃথিবীর মানুষ জানত না বা কমন সেন্স থেকে বলতে পারত না এবিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের মুখেই শুনুন বা তাদের লিখা হতেই পড়ুন আশাকরি উত্তর পাবেন, কোরআন যে আসলেই ঐশ্বরিক কিছু তাও হয়তো খুজে পেতে পারেন , কোরআনের বিজ্ঞান নিয়ে এখানে দেখুন
http://www.sultan.org/articles/QScience.html

কোরআন যে সবার জন্য এটার প্রমান হচ্ছে আপনি চাইলে কোরআনে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করতে পারেন চাইলে না করতে পারেন তবে কোরআন নাযীল হয়েছিল মানুষের মোরাল, সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জণ্য সুষম সমাজ ব্যবস্থার জন্য কোরআন সাইন্টেফিক গবেষনার চেয়ে মানুষের মনের গবেষনায় বেশি মনোযোগি

Qur’an is psychological, look into yourself, look outside of yourself. The Qur’an guides a person through different forms of Psychological Reflection.

Use your sense of balance and justice (universally recognised principles) – but ask yourself where did you get your balance from? How can that balance make you become even better, by not just believing its right, but implementing and spreading balance and justice among mankind too.

It goes beyond philosophy, it actually guides to what is higher than human thought. This is Qur’anic logic.

তো এটা কি সর্বকালের মানুষের জন্য হলো না? কারন সর্বকালে শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই থাকবে তো অশিক্ষিতদের জন্য সাধারন আলোচনা আর শিক্ষিত বা বিজ্ঞদের জন্য বিজ্ঞ আলোচনা, তানাহলে তো আপনারাই বলা শুরু করবেন কোরআন নাকি সর্বকালের তাইলে এইটাতে একটা সাইন্সের কিছু দেখাও এজন্যই কোরআনে আল্লাহ সকল কিছুই আলোচনা করেছেন যতটুকু দরকার, বাকী মানুষের উপর সে কত গবেষনা আর শিক্ষার মাধ্যেমে এগিয়ে নিতে পারে। মানুষ যতই সাইন্টিফিকলি আগে বাড়ুক তার মন, আর চিন্তা\ আকাক্ষা তো মানুষের প্রবত্তি, হিংসা, ক্ষোভ, ঘৃনা, ভালোবাসা, আশা, নিরাশা হতাশা সেই একই আছে তাই মোরাল বা মেইন থিমটাতে জোর বেশি দেয়া হয়েছে কোরআনে,

কোন বিষয়ে বিস্তারিত গবেষনা, সমসাময়িক বিষয়ে বিস্তারিত সমাধান সেটা যুগের সথে সে সময়কার বিজ্ঞরা নির্ধারন করবেন। কিন্তু মোরাল বা মেইন থিমটা কিন্তু কোরআনেরই থাকবে যেমন পিতা মাতার সাথে ভাল ব্যবহার, স্ত্রী, কন্য নারীর অধিকার, প্রতিবেশির দায়িত্ব, সমাজের প্রতি দায়িত্ব, রাস্ট্রের প্রতি দায়িত্ব , মানুষে মানুষে আচার আচরন এর মানদন্ড এ সকলই কোরআনে রয়েছে কোরআনরের মুল শিক্ষাই হলো মানুষকে ভালো পথে পরিচালিত করা সরল পথে যে পথে রয়েছে শান্তি যদি সঠিক ভাবে কোরআনের বিধান মানা হয়।




0 comments
Labels: , ,

নাস্তিকদের লিখা পড়ে তার উত্তর দেয়া সম্পর্কে

তাদের লিখা যদি যুক্তি পুর্ন হয় তবে কেন পড়বেন না যদি নাই জানেন কোন বিষয়ে তাদের সহমত নেই তবে সবাই একমত হবো কি করে। তবে বাজে বা ইচ্ছাকৃত ভাবে ইসলামকে হেয় করলে বা সমাজে বিশৃংক্ষলা সৃস্টি করলে সেটা এরিয়ে যাওয়াই উত্তম ,

উত্তর দেয়ার চেস্টা করা যাবে যদি আপনি সেবিষয়ে জানেন অনেক বিষয়ে আমিও ভাল জানিনা তবে যতটুকু জানি সেই থেকে উত্তর দেয়ার চেস্টা করি নিজের কাছেও ক্লিয়ার হওয়ার জন্য।

এবার কিছু কোরআনের আয়াত:

২)সুরা বাকারা আয়াত: ৭: আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

৪১) সূরা হা-মীম সেজদাহ , আয়াত নং ৫৩ : এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়? Quran Fussilat 41:53


২৭) সূরা নমল আয়াত ৬৩ : বলুন তো কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহের পূর্বে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন? অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।

২৭) সূরা নমল আয়াত: ৬৪: বলুন তো কে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন এবং কে তোমাদেরকে আকাশ ও মর্তø থেকে রিযিক দান করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর।

২৭) সূরা নমল আয়াত ৮১: আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। অতএব, তারাই আজ্ঞাবহ।

১৬) সুরা নাহল আয়াত ১২৫ :"আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে। "

২৯) সুরা আল আনকাবুত আয়াত নং ৪৬: "তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয়, যারা তাদের মধ্যে বে-ইনসাফ। এবং বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই এবং আমরা তাঁরই আজ্ঞাবহ। "

৩৩) সুরা আল আহযাব আয়াত ৪৮ : আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের উৎপীড়ন উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। আল্লাহ কার্যনিবার্হীরূপে যথেষ্ট।

৪)সুরা আন নিসা আয়াত ১৪০ " আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।"

পৃথিবীতে সবাই মুসলমান হবে না আর সবাই অবিশ্বাসীও হবে না সবার সহ অবস্থানের মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা এবং সবার সুন্দর জীবনের নিরাপত্তা বিধানই হোক সবার মুল লক্ষ্য - মানুষের কল্যানের জন্যইতো এত বিধান , নিয়ম নীতি, আলোচনা ও সমালোচনা তাই না। সবার কল্যান কামনা

লিখেছেন-  ফয়সাল হাসান

0 comments
Labels: , ,

আল্লাহ সব জায়গায় আছেন এটা কোন অর্থে বলা হয়েছে


সুরা নং ২ বাকারা আয়াত ১১৫ "পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। "

এখানে সকল কিছু যে আল্লাহর বা সকল বিষয়ে যে আল্লাহ জানেন সেটাই বোঝানো হয়েছে।

আরো দেখুন সুরা নং ২ সুরা বাকারা আয়াত নং ২৫৫ আল্লাহ বলেন:

"আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।"

আল্লাহ ফিজিক্যলি সকল জায়গায় আছেন এটি বোঝায় না বরং সব জায়গার সকল কিছুর স্রস্টা তিনি, তিনি সকল বিষয়ে জানেন -এটাই মুল বিষয়।

এবং আয়াত ২৮৪ "যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।"

৩) সূরা আল ইমরান আয়াত নং ৫ "আল্লাহর নিকট আসমান ও যমীনের কোন বিষয়ই গোপন নেই। "

৪) সুরা আন নিসা আয়াত নং ১২৬ : "যা কিছু নভোন্ডলে আছে এবং যা কিছু ভুমন্ডলে আছে, সব আল্লাহরই। সব বস্তু আল্লাহর মুষ্ঠি বলয়ে।" এবং আয়াত ১৩২ "আর আল্লাহরই জন্যে সে সবকিছু যা কিছু রয়েছে আসমান সমূহে ও যমীনে। আল্লাহই যথেষ্ট কর্মবিধায়ক ।"

৫) সূরা আল মায়েদাহ আয়াত নং ৭:"নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্তরের বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন। "

৬) সূরা আল আন-আম আয়াত ৫৯:"তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।"

৬) সূরা আল আন-আম আয়াত ১০৩:" দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ।

৯) সূরা আত তাওবাহ আয়াত ৭৮:"তারা কি জেনে নেয়নি যে, আল্লাহ তাদের রহস্য ও শলা-পরামর্শ সম্পর্কে অবগত এবং আল্লাহ খুব ভাল করেই জানেন সমস্ত গোপন বিষয় ?"

১৩) সূরা রা’দ আয়াত ৯-১০:" তিনি সকল গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় অবগত, মহোত্তম, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। তোমাদের মধ্যে কেউ গোপনে কথা বলুক বা তা সশব্দে প্রকাশ করুক, রাতের অন্ধকারে সে আত্নগোপন করুক বা প্রকাশ্য দিবালোকে বিচরণ করুক, সবাই তাঁর নিকট সমান। "

লিখেছেন-  ফয়সাল হাসান

1 comments
Labels: ,

কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য পর্ব ৭: সূরা আল আহযাব ৩৩) আয়াত ৪

কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব ৭ সূরা আল আহযাব সুরা নং ৩৩) আয়াত ৪

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

আবার নিয়ে এলাম কোরআনের ভাষা গত সৈন্দর্য পোস্ট নিয়ে। এই পোস্ট সমুহে আমরা কোরআনের একটি আয়াতের সুন্দর শব্দ/বর্ন বিন্যাস ও কেন তা ব্যবহৃত হয়েছে তার কারন জানার চেস্টা করি। আজ দেখবো
সূরা আল আহযাব সুরা নং ৩৩) ( মদীনায় অবতীর্ণ ), আয়াত ৪

مَّا جَعَلَ اللَّهُ لِرَجُلٍ مِّن قَلْبَيْنِ فِي جَوْفِهِ وَمَا جَعَلَ أَزْوَاجَكُمُ اللَّائِي
বাংলা অনুবাদে দেয়া আছে: আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি।

সঠিক অনুবাদ হবে: আল্লাহ কোন পুরুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। কারন لِرَجُلٍ অর্থ পুরুষ , মানুষ নয় (মানুষ হলে স্ত্রী পুরুষ উভয়কে বুঝাত)

ইংরেজী অনুবাদ সমুহ: দেখুন Click This Link
Al-Ahzab Verse:004
Abdul Daryabadi : Allah hath not placed unto any man two hearts in his inside।

Dr. Mohsin : Allâh has not made for any man two hearts inside his body.

Mufti Taqi Usmani : Allah has not made for any man two hearts in his chest cavity,

Pickthal : Allah hath not assigned unto any man two hearts within his body,

Yusuf Ali : Allah has not made for any man two hearts in his (one) body:


এবার আসি মুল বিষয়ে কোরআনের এই আয়াতের ভাষার সুন্দরতা/ স্বচ্ছতা/ সূক্ষ্মতা/ সৌন্দর্য বিষয়ে:

আয়াতটি ছিল আল্লাহ কোন পুরুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি।

দেখুন আল্লাহ যিনি একমাত্র উপাসনা ও অনুগত্য পাবার যোগ্য তিনি সুন্দর ভাবে বলেন যে তিনি কোন পুরুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি
এখানে কাকে বাদ দেয়া হয়েছে নারী কে তাই না? তিনি যদি বলতেন তিনি কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি তবে সেটা স্ত্রী পুরুষ উভবে বুঝাত মানে সবার ক্ষেত্রে কথাটা বলা হতো।

কিন্তু আপনি যদি لِرَجُلٍ অর্থ দেখেন দেখবেন সেটা পুরুষকে বোঝায় মানে নারী অর্ন্তভুক্ত নয় গুগুল ট্রন্সলেটে ইংরেজি থেকে এরাবিক দেখতে পারেন رجل অর্থ man, male, leg, boy, pin, bloke বা যেকোন ভালো আরবী জানা লোককে বা ইমামের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।

এবং সেই আয়াতে অরো লক্ষ্য করলে দেখবেন যে এই আয়াতের বাকী অংশে নারীদের কে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু প্রথম অংশটি বিশেষ ভাবে পুরুষকে নিয়ে বলা হয়েছে ।

আরো মজার বিষয় লক্ষ্য করবেন যে যখনি কোন আয়াতে হার্টের কথা বলা হয়েছে সেখানে সাধারনত বলা হয়ে থাকে "আল কুলুবিল্লাতি ফিস সুদুর" হার্ট বা হৃদয় যা বুকের মধ্যে বিদ্যমান বা হার্ট বুকের ভিতরে কিন্তু এই নিদ্দির্স্ট আয়াতে এসে হার্ট হৃদয়ে বা বুকের মাঝে না বলে তিনি جَوْفِهِ যাউফ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ পুরো বডি/শরীর মানে এই আয়াতে বলা আছে পুরুষের সারা বডির ভিতরে আল্লাহ দুটি হার্ট দেন নি বা দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি।

এবার এত সুক্ষ সুন্দর পারফেক্ট শব্দ সিলেকশনের কারন কি জানেন: কারন নারী গর্ভবতী হতে পারে আর নারী যদি গর্ভবতী হন তবে নারীর ভিতরে দুটি হৃদয় থাকে এক তার এবং অন্যটা বাচ্চার এবং হার্ট দুটো শুধু বুকেই বিদ্যামান থাকেনা কারন বাচ্চা থাকে পেটের দিকে তাইনা এজন্যই جَوْفِهِ যাউফ শব্দটি অর্থ পুরো বডি/শরীর বেশি উপযুক্ত

এজন্য আল্লাহ আয়াতের প্রথম দিকে যখন পুরুষের কথা বলেন তখন তিনি বলেন দুটি হৃদয় স্থাপন করেন নি। এবং এজন্যই আয়াতটি ত্রুটি মুক্ত কারন নারী সহ বা মানুষ কে বললে আয়াতটি ভুল হতো।

এতে আরো একটি বিষয় প্রতিয়মান হয় যে কোরআন মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয়। মানুষের রচিত হলে এই সুক্ষ ভুল সমুহ রয়ে যেত তাই নয় কি?

ভিডিও লিংক: || Subtlety in Language | GBMProductions | Nouman Ali Khan || HD

অনুবাদ করে লিখেছেন-  ফয়সাল হাসান

0 comments
Labels: ,

ইসলাম অনুসারে পীর ও মুরীদ এবং মাযার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ একটি লিখাঃ-

ইসলামী বিধান অনুসারে পীর ও মুরীদ এবং মাযার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ একটি লিখাঃ-


পীর-মুরীদ কাকে বলে?

পীর শব্দটি ফার্সি। আরবীতে বলা হয় মুরশীদ। মুরশীদ শব্দের অর্থ হল পথপ্রদর্শক। যিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার প্রশিক্ষণ দেন তার নাম মুরশীদ বা পথপ্রদর্শক। যাকে ফার্সীতে বলে পীর।

“মুরীদ” শব্দটিও আরবী। যার অর্থ হল ইচ্ছাপোষণকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার ইচ্ছা পোষণ করে কোন বুযুর্গ ব্যক্তির হাত ধরে শপথ করে, সে ব্যক্তির নাম হল “মুরীদ”।

এ ব্যাখ্যা থেকে একথা স্পষ্ট হল যে, পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চায় সে শিক্ষার্থীর নাম হল “মুরীদ”।

সুতরাং যে ব্যক্তি নিজেই শরীয়তের বিধান মানে না, নামায পড়ে না, পর্দা করে না, সতর ঢেকে রাখে না বা শরীয়তের আবশ্যকীয় কোন বিধান পালন করে না, সে ব্যক্তি কিছুতেই পীর তথা মুর্শীদ হতে পারে না। কারণ তার নিজের মাঝেই যখন শরীয়ত নেই, সে কিভাবে অন্যকে শরীয়তের উপর আমল করা প্রশিক্ষণ দিবে? নিজেইতো প্রশিক্ষিত নয়।

আর পীর মুরীদির এ পদ্ধতি রাসূল (সাঃ) থেকে চলে আসছে। রাসূল (সাঃ) সাহাবাদের আল্লাহমুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতেন। সাহাবারা রাসূল (সাঃ) এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতেন। বলা যায় রাসূল (সাঃ) হলেন সবচেয়ে প্রথম ও বড় পীর, ও সাহাবায়ে কিরাম হলেন প্রথম মুরীদ।

কুরআন হাদীসে পীর মুরিদীর প্রমাণঃ-

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

অনুবাদ-হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক। {সূরা তাওবা-১১৯)

এ আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে বুযুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ

অনুবাদ-আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ। {সূরা ফাতিহা-৬,৭}

সূরায়ে ফাতিয়ায় মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর নিয়ামাতপ্রাপ্ত বান্দারা যে পথে চলেছেন সেটাকে সাব্যস্ত করেছেন সীরাতে মুস্তাকিম।
আর তার নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দা হলেন-

الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ

অনুবাদ-যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, ও নেককার বান্দাগণ। {সূরা নিসা-৬৯}

এ দু’ আয়াত একথাই প্রমাণ করছে যে, নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা হলেন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, আর নেককারগণ, আর তাদের পথই সরল সঠিক তথা সীরাতে মুস্তাকিম। অর্থাৎ তাদের অনুসরণ করলেই সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলা হয়ে যাবে।

যেহেতু আমরা নবী দেখিনি, দেখিনি সিদ্দীকগণও, দেখিনি শহীদদের। তাই আমাদের সাধারণ মানুষদের কুরআন সুন্নাহ থেকে বের করে সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলার চেয়ে একজন পূর্ণ শরীয়তপন্থী হক্কানী বুযুর্গের অনুসরণ করার দ্বারা সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলাটা হবে সবচে’ সহজ। আর একজন শরীয়ত সম্পর্কে প্রাজ্ঞ আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তির সাহচর্য গ্রহণ করার নামই হল পীর মুরিদী।

রাসূলে কারীম (সাঃ) একাধিক স্থানে নেককার ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমন-

عن أبي موسى رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( مثل الجليس الصالح والسوء كحامل المسك ونافخ الكير فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحا طيبة ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك وإما أن تجد ريحا خبيثة )

অনুবাদ-হযরত আবু মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-সৎসঙ্গ আর অসৎ সঙ্গের উদাহরণ হচ্ছে মেশক বহনকারী আর আগুনের পাত্রে ফুঁকদানকারীর মত। মেশক বহনকারী হয় তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তুমি নিজে কিছু খরীদ করবে। আর যে ব্যক্তি আগুনের পাত্রে ফুঁক দেয় সে হয়তো তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে, অথবা ধোঁয়ার গন্ধ ছাড়া তুমি আর কিছুই পাবে না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫২১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৮৬০, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩১৯০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৮৩১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬১, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪২৯৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৬৬০, মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৭৭০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২৬২২, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-১৩৭৭, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৫১৫}

এছাড়াও অনেক হাদীস নেককার ও বুযুর্গ ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণের প্রতি তাগিদ বহন করে। আর সবচে’ বড় কথা হল-বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই দ্বীন বিমুখ। যারাও দ্বীনমুখী, তাদের অধিকাংশই কুরআন হাদীসের আরবী ইবারতই সঠিকভাবে পড়তে জানে না, এর অর্থ জানবেতো দূরে থাক। আর যারাও বাংলা বা অনুবাদ পড়ে বুঝে, তাদের অধিকাংশই আয়াত বা হাদীসের পূর্বাপর হুকুম, বা এ বিধানের প্রেক্ষাপট, বিধানটি কোন সময়ের জন্য, কাদের জন্য ইত্যাদী বিষয়ে সম্যক অবহিত হতে পারে না। তাই বর্তমান সময়ে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ থেকে নিজে বের করে আল্লাহ তাআলার উদ্দিষ্ট সীরাতে মুস্তাকিমে চলা বান্দার জন্য কষ্টসাধ্য। তাই আল্লাহ তাআলা সহজ পথ বাতলে দিলেন একজন বুযুর্গের পথ অনুসরণ করবে, তো সীরাতে মুস্তাকিমেরই অনুসরণ হয়ে যাবে।

কিন্তু কথা হচ্ছে যার অনুসরণ করা হবে সে অবশ্যই সীরাতে মুস্তাকিমের পথিক হতে হবে। অর্থাৎ লোকটি {মুরশীদ বা পীর} এর মাঝে থাকতে হবে শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ। বাহ্যিক গোনাহ থেকে হতে হবে মুক্ত। কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে হতে হবে প্রাজ্ঞ। রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের উপর হতে হবে অবিচল। এমন গুনের অধিকারী কোন ব্যক্তি যদি পাওয়া যায়, তাহলে তার কাছে গিয়ে তার কথা মত দ্বীনে শরীয়ত মানার নামই হল পীর মুরিদী। এরই নির্দেশ আল্লাহ তাআলা কুরআনে দিয়েছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

অনুবাদ-হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক। {সূরা তাওবা-১১৯)

বিঃদ্রঃ আখেরাতে নাজাত পাওয়ার জন্য মুরীদ হওয়া জরুরী নয়। তবে একজন হক্কানী পীরের কাছে মুরীদ হলে শরীয়তের বিধান পালন ও নিষিদ্ধ বিষয় ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ঠা আসে মুরুব্বীর কাছে জবাবদিহিতা থাকার দরুন। সেই সাথে আল্লাহর ভয়, ইবাদতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে বেদআতি, ভন্ড, মাজারপূজারী, বেপর্দা পীরের কাছে মুরিদ হলে ঈমানহারা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে আটরশী, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, মাইজভান্ডারী, রাজারবাগী, ফুলতলী, মানিকগঞ্জী, কেল্লাবাবা ইত্যাদী পীর সাহেবের দরবারে গেলে ঈমানহারা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সাবধান পীর নির্ধারণের ক্ষেত্রে।

প্রসঙ্গ মাযারঃ-

“মাযার” শব্দটি আরবী। বাংলা অর্থ হল যিয়ারতের স্থান। যে স্থানকে যিয়ারত করা হয়, তার নামই মাযার। মুসলমানের কবর যিয়ারত করা জায়েজ। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-

عن ابن بريدة عن أبيه قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فإن فى زيارتها تذكرة

অনুবাদ-হযরত ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলা, এখন যিয়ারত কর। [কোন সমস্যা নেই।]। কেননা কবর যিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করে দেয়। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৭০০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩০৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৫৭১, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬৯}

কবর যিয়ারত করা ছাড়া কবর তথা মাযার ঘিরে আরো যত কাজ করা হয়, তা সবই বিদআত। এসব করা জায়েজ নেই। যেমন-

১-মাযার ঘিরে উরস করা।
২-মাযারে বাতি প্রজ্বলন করা
৩-মাযারে মান্নত মানা।
৪-মাযারে গিয়ে দুআ করা। মৃত ব্যক্তির কাছে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে দেওয়ার আবেদন করা।
৫-মাযারে শিন্নি পাকানো ইত্যাদী সকল কাজই বিদআত ও শরীয়ত গর্হিত কাজ। এসব করা খুবই গোনাহের কাজ। এসবের কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। সম্পূর্ণ হারাম এ সকল কাজ।

মাযার ঘিরে উরস করা হারামঃ-

স্বীয় কবরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করাকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহর নবী ইরশাদ করেন-

عن أبى هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « لا تجعلوا بيوتكم قبورا ولا تجعلوا قبرى عيدا وصلوا على فإن صلاتكم تبلغنى حيث كنتم (سنن ابى داود-كتاب المناسك، باب زيارة القبور، رقم الحديث-2044)

“তোমরা স্বীয় ঘরকে কবর বানিয়োনা। (অর্থাৎ কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তেলাওয়াত ও যিকির ইত্যাদি বিহীন করনা।) এবং আমার কবরে উৎসব করোনা।(অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন আসরের আয়োজন করনা। তবে হ্যাঁ আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।(আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতারা পৌঁছিয়ে দেন।)” {সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪/৪০}

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- রাসূলে (সাঃ) নিজ রওযা মুবারকে উৎসব (উরস) পালন করতে বারণ করেছেন। তাহলে অন্য কে আর এমন আছে যার কবরে তা বৈধ হবে?

হাদিসের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুনাভী (রাহঃ) এই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-

قال المناوي ويؤخذ منه أن اجتماع العامة في بعض أضرحة الأولياء في يوم أو شهر مخصوص من السنة ويقولون هذا يوم مولد الشيخ ويأكلون ويشربون وربما يرقصون فيه منهي عنه شرعا وعلى ولي الشرع ردعهم على ذلك وإنكاره عليهم وإبطاله (عون المعبود-كتاب المناسك باب زيارة القبور-6/23)

“এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণ মানুষ যারা বছরের কোন নির্দিষ্ট মাসে বা দিনে (উরসের নামে) ওলীদের মাযারে একত্রিত হয় এবং বলে-আজ পীর সাহেবের জন্ম বার্ষিকী (মৃত্যু বার্ষিকী), সেখানে তারা পানাহারেরও আয়োজন করে, আবার নাচ গানেরও ব্যবস্থা করে থাকে, এ সবগুলিই শরীয়ত পরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। এ সব কাজ প্রশাসনের প্রতিরোধ করা জরুরী। (আউনুল মা’বুদ-৬/২৩)

মাযার ঘিরে বাতি প্রজ্বলন হারামঃ-

عن ابن عباس قال : لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج (سنن الترمذى- أبواب الصلاة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم ، باب ما جاء في كراهية أن يتخذ على القبر مسجدا-2/136)

“হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী (সাঃ) অভিশম্পাত করেছেন (বেপর্দা) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ বানায় (কবরকে সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে। {জামি তিরমীযী-২/১৩৬}

উক্ত হাদিসে সুষ্পষ্ট কবরে বাতি প্রজ্জ্বলনকারীর উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশম্পাত করেছেন আল্লাহর নবী (সাঃ)।

মাযারে মান্নত করা হারামঃ-

আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত বা কুরবানী করা যায়না। কারণ মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া কারা জন্য করা জায়েজ নয়। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (163) (سورة الأنعام-162-163)

“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং প্রথম আনুগত্যশীল। (সূরা আনআম-১৬২-১৬৩)

সূরা কাউসারে মহান রাব্বুর আলামীন বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। {সূরা কাউসার-২}

আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীন পালনের নামে বদ দ্বীনী কাজ করা থেকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।


## আপনার প্রিয়জনদের কাছে পৌঁছে দিন ইসলামের শাশ্বত বাণী। হৃদয় থেকে হৃদয় উদ্ভাসিত হোক ঈমানের আলোকচ্ছটায়।

0 comments
Labels: , , ,

মহানবী ও-পবিত্র ধর্মের কটূক্তিকারীদের ইসলাম কি বলে?




মহানবী ও-পবিত্র ধর্মের কটূক্তিকারীদের তালিকা করার নির্দেশ এবং ইসলাম কি বলে?

ব্লগ, ফেসবুক, ইন্টারনেট, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে যারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র ধর্মকে কটূক্তি করেছে, তাদের তালিকা প্রস্তুত ও তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল এ তথ্য জানান।তিনি আরও জানান, অচিরেই কমিটি গঠন করে এ তদন্ত কাজ শুরু হবে।   সুত্র: টিভির ব্রেকিং নিউজ এবং ওয়েবে Click This Link

খুবই ভাল উদ্যোগ তবে এর ফলে যাতে নাস্তিক এবং ইসলামের সমালোচনাকারীদের প্রতি যেন আবিচার হয়রানী বা যুলুম করা না হয়, এটা হোক তাদের জন্য যারা ইসলামের সমালোচনা নয় বরং ইসলাম নিয়ে বাজে কথা লিখে সমাজে অশান্তি ছরায়, কারন ইসলামের শুরু থেকেই ইসলেমের বিরোধীরা ছিল, এখনো আছে আর ভবিশ্যতেও থাকবে কনফার্ম, আমার দেখা এই ব্লগে অনেক নাস্তিক দেখেছি যারা ইসলামের সমালোচনা নয় বরং ইসলামের সমালোচনার নামে ঘৃনা ছরিয়ে হিট ব্লগার হতে চেয়েছে আবার অন্যদিকে সত্যিকারের চিন্তাশীল সমালোচকও দেখেছি যিনি ঘৃনা নয় বরং অন্যভাবে ইসলামকে বোঝার চেস্টা করেছেন।

ইসলামের বিদ্বেষীরা মহানবী (সাঃ) এর জীবদ্দশায়ই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের দ্বারা তাঁকে এবং তাঁর অনুসারীদেরকে কষ্ট দিতে কোন ত্রুটি করেনি।এখনো সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। মহানবী (সাঃ) তাঁর ধৈর্য, মহত্ত্ব ও উদারতার দ্বারা শত্রুর এসব নিন্দা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ উপেক্ষা করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন।আমাদের উচিত মহানবী (সাঃ)এর আদর্শকে সমুন্নত রেখে ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ ধরণের উস্কানির প্রতিবাদ করা।

একটা বিষয় সবাইকে বুঝতে হবে যে পৃথীবিতে ভিন্নমতের মানুষ থাকবেই, সবাই মুসলিম হবে ঈমান আনবেন এমন কথা নাই , আমাদের যেমন দায়িত্ব ইসলামের বানী প্রচার করা শান্তি বজায় রাখা তেমনি তাদেরও দায়িত্ব আমাদের মহানবীর বা ইসলামের প্রতি খারাপ শব্দ বা ভাষার প্রয়োগ না করা, যাতে সমাজে বিশৃখলা হয়, ইসলামের সমালোচনা করুন আপত্তি নেই তার মানে এই নয় যে ইসলামকে, আল্লাহকে, মহানবী (সঃ) কে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করবেন।

মুক্তচিন্তা মুক্তচিন্তা করে যারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেন তাদের কে বলি নাস্তিক মানেই কি ইসলাম নিয়া গালাগালি ? মুক্তচিন্তার লেখক কখনো অন্যকে গালি দিবেন না তিনি যুক্তি ভিত্তিক কথা বলবেন হিট ব্লগার সেলিব্রেটি হওয়ার জন্য সাধারন মানুষদের বিশ্বাস নিয়ে যা তা বলা কোন যুক্তি ছারা মুক্তচিন্তার আওতায় পড়ে না।

মুক্তচিন্তা আর বাক স্বাধিনতা মানে কি মতের "কিছু অমিল" হলে : একজনকে " কুত্তার বচ্চা" বলে গালি দেওয়া । মত প্রকাশের স্বাধিনতা সম্পর্কে লেখক Evelyn Beatrice Hall, (1868 – after 1939), যিনি ছদ্বনাম S.G. Tallentyre হিসেবে লিখেন ,তিনি বলেন "I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it." মানে "আপনি যা বলছেন আমি তার সাথে একমত নই তবে আমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত আপনার কথা বা বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাব।"

এখন আপনার মুক্ত চিন্তার জন্য আমি লড়াই করতে প্রস্তূত সেই মুক্তচিন্তার দোহাই দিয়ে আপনি র্নিবোধের মত আমার ধর্ম কে আমার নবী কে আমার বিস্বাস কে আমার স্রস্টাকে খুব বাজে ভাবে খারাপ ভাষায় উপস্থাপন করবেন আপনি সেটা কি ঠিক ? মুক্ত চিন্তা মানে মিথ্য বলা নয় মুক্ত চিন্তা মানে অন্যকে ইনসাল্ট/অপমান করা নয়। আমাকে আমার বিশ্বাস কে সম্মান করতে না পরলে আপনার সে বিষয়ে কথা বলার অধিকার নেই বলে মনে করি।

আমাদের সবার উচিৎ সকল ধর্মকে, সকাল মানুষ কে একসাথে নিয়ে দেশের কাজ করা ধর্ম যার যার দেশটা সবার। আমরা যারা পরবাসী আমাদের সবাই বাংলাদেশি বলে চিনে বলে না সে বাংলাদেশি মুসলিম বা বাংলাদেশী হিন্দু, খ্রিস্টান ইত্যাদি।

আস্তিক বা নাস্তিক হওয়ার আগে সবার উচিৎ ভাল মানুষ হওয়া সেই ভাল মানুষ হতে ধর্ম আপনাকে সাহাজ্য করে আর যদি ধর্ম না মানেন তবুওতো কথা একটাই সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।

ব্লগে যে নাস্তিক আস্তিক মিলে সুস্থ আলোচনা হতে পারে তা কি বিশ্বাস করেন? না করলে এই পোস্ট গুলো ও কমেন্ট গুলো দেখুন

ইসলাম : যে- কোন প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত সময়ে পরিপূর্ণ উত্তর
Click This Link

নারী ও ইসলাম- আসুন দেখি সত্যের চোখে
Click This Link

রাসূল (সঃ)এর অবমাননা ও আমাদের করনীয় -
Click This Link

এমন আরো অনেক পোস্ট রয়েছে কিভাবে সুন্দর আলোচনার মাধ্যমে একটা বিষয়কে বিভিন্ন ভাবে দেখা যায় আর সত্যিটা বোঝা যায় সেটাইতো ব্লগিংয়ের মুল উদ্দেশ্য তাই না।

এই ভিডিওটা পোস্টের সাথে সংগতিপুর্ন তাই এড করছি
#NoHaters | Why you will love Islam | 2013 | HD


পরিশেষে মহান আল্লাহর বানী দিয়ে শেষ করি: ক) কোরআনে সুরা আল মায়েদাহ সুরা নং৫ আয়াত নং ৩২ এ দেখুন
এ কারণেই আমি বনী-ইসলাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছেন। বস্তুতঃ এরপরও তাদের অনেক লোক পৃথিবীতে সীমাতিক্রম করে।

খ) সূরা আল ইমরান সুরা নং ৩) আয়াত ১৮৬ "অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার। "

গ) সূরা আন নিসা সুরা নং ৪ আয়াত নং ১৪০ " আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।" 

 লিখেছেন-  ফয়সাল হাসান

0 comments
Labels:

ইসলামী দৃষ্টিকোণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

বাংলাদেশের বিজয় বা স্বাধীনতা দিবস এলেই কিছু মানুষকে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায়। এ সুযোগে তারা নিজেদের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ইসলাম বিদ্বেষ কিংবা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা পরোক্ষে বলতে চান, ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি পাকিস্তানের জুলুম-বঞ্চনার বিরুদ্ধে নয়; ইসলামের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে এ দেশের লাখ লাখ মুসলিম প্রাণ দিয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষবাদ কায়েমের জন্য। আরেকটু বাড়িয়ে বললে, ইসলাম থেকে বিযুক্ত হবার উদ্দেশে!

এমন জঘন্য ইতিহাস বিকৃতি বা মিথ্যাচার এ দেশে আর কেউ করেনি। তথাকথিত সুশীল নামের কিছু ব্যক্তি যে মিথ্যার বেসাতি সাজিয়েছেন তার কোনো তুলনা হয় না। কারণ, সত্য হলো, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধটি ছিল জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের যুদ্ধ ছিল পাকিস্তানের জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। ইসলামের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ হয় কীভাবে, ইসলামই তো মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশের প্রেরণা ছিল। কেননা জুলুম বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইসলামই সবচে বেশি সোচ্চার। গোড়া থেকেই ইসলাম জুলুম সহ্য করে নি। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বারবার জুলুম থেকে বারণ করা হয়েছে। নানা উপলক্ষ্যে জুলুমের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। উপরন্তু জুলুম প্রতিরোধে ইসলামে জিহাদের বিধান রাখা হয়েছে।

বরং তেতো সত্য হলো, এখন যারা অতি কষ্টে পাকিস্তানকে ইসলামের সমার্থক বানিয়ে তাদের ইসলামবিদ্বেষ চরিতার্থের ব্যর্থ প্রয়াস চালান, এদের কেউ কেউ যুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিলেন। আজ যেমন তাদের স্ত্রীরা হিন্দি সিরিয়াল আর শিশুরা হিন্দি ডোরেমন নিয়ে মাতোয়ারা থাকেন। হিন্দি গান ও নাচ ছাড়া তাদের কোনো অনুষ্ঠানই যেন জমে না। অবাক লাগে, আজও যখন স্বাধীনতার সুফল থেকে বঞ্চিত রয়েছে অনেক পঙ্গু বা আহত মুক্তিযোদ্ধা, তখন এসব সুবিধেবাদী ব্যস্ত স্বাধীনতার চেতনার নামে নিত্য নতুন বিভেদ সৃষ্টিকারী তত্ত্ব ও বানোয়াট তথ্য আবিষ্কারে। তখন যারা জীবনবাজী রেখে লড়াই করেছিলেন সেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু কখনোই এসব ভাবেননি কিংবা আজও তেমন ভাবেন না।

আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, এর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র বা চলচ্চিত্র কিংবা পরিবারের কাছে রণাঙ্গণ থেকে পাঠানো মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠিপত্র দেখলেই সে কথা জানতে পারি। এসব থেকে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গণে যাবার আগে আল্লাহর কাছে সালাত আদায়ান্তে মুনাজাত করে রওনা হয়েছেন। বাবা, মা বা স্ত্রীর অশ্রুসজল চোখের দিকে চেয়ে তাঁদের হৃদয় নিংড়ানো দুআ আর কায়োমন প্রার্থনা শুনেই তাঁরা ছুটেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের শতকরা একজনও সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা কী তা জানতেন বলে মনে হয় না। অথচ অমুক্তিযোদ্ধারাই এসব চেতনা চাপিয়ে দিচ্ছেন আজ আমাদের ওপর।

বছর খানেক আগে আমি গিয়েছিলাম শেরপুরের এক সীমান্তঘেঁষা পল্লী মরিয়ম নগরে। খ্রিস্টান মিশনারির তৎপরতায় সেখানে অনেক মুসলিম নর-নারী খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর রহমতে ময়মনসিংহের কিছু উদ্যমী ও দায়িত্বসচেতন আলেমের তৎপরতায় আবার তাঁরা ইসলামে ফিরে আসেন। ওই গ্রামে একটি ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল ইসলামের সুমহান শান্তির বাণী এবং শ্রেষ্ঠত্বের অনস্বীকার্য বাস্তবতা তুলে ধরতে। আলোচক হিসেবে সেখানে যাবার সময় দুর্গম পথে দেখা হয়েছিল স্থানীয় একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সঙ্গে। নাম মনে না থাকলেও ভদ্রলোকের শ্মশ্রুমণ্ডিত টুপি-পাঞ্জাবিপরা ইসলাম অন্তপ্রাণ চেহারাটি মনে এখনো জ্বলজ্বল করছে। দুর্গম পথে এক পর্যায়ে তিনি আমাদের সঙ্গী হলেন পথপ্রদর্শক হিসেবে।

গাড়িতে পাশের সিটে বসে আমি দাদার বয়েসী ওই মুরুব্বির ছোট্ট একখান সাক্ষাৎকারই নিয়ে ফেললাম। জানালেন ক’দিন পরেই তিনি ঢাকায় আসছেন মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে। সেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা দেবেন প্রধান অতিথি হিসেবে। তাঁর মুখে এ প্রসঙ্গ শুনতেই আমার মনে হলো তাঁকেই জিজ্ঞেস করা দরকার আমার দীর্ঘদিনের লালিত সেই মোক্ষম প্রশ্নটি। আচ্ছা বুযুর্গ, আপনারা যুদ্ধ করেছিলেন কী উদ্দেশ্যে? ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েম করা বা ইসলাম নির্মূল করার কোনো অভিপ্রায় ছিল কি তখন কোনো মুক্তিযোদ্ধার অন্তরে?

দ্ব্যর্থহীনভাষায় তাঁর উত্তর : ‘বাবা, এসব হলো এখনকার মুক্তিযোদ্ধা ব্যবসায়ীদের স্বার্থান্ধ দাবী। আমরা লড়াই করেছি জালেম হটিয়ে মজলুমদের বাঁচাতে। ইসলামই আমাদের সে প্রেরণা যুগিয়েছে। ইসলাম কখনো জালেমের পক্ষে নয়। ইসলাম সবসময় জালেম নির্মূল করতে বলে। আচ্ছা, স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের কজন আছেন যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস নিয়ে মরেন নি? তাঁরা সবাই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেই লড়াই করেছেন। এই সম্পদ বুকে নিয়েই শহীদ হয়েছেন। আমরা সবাই ফজর নামাজ পরে আল্লাহর কাছে কেঁদে বুক ভাসিয়ে মুনাজাত করেই চলে গেছি যুদ্ধক্ষেত্রে।’

আমার ভোলার বন্ধু চিন্তাশীল তরুণ লেখক মাওলানা আবুল কাসেম আদিল এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, তার বাবা ও চাচারাও মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মুখে তিনি একাধিকবার মুক্তিযুদ্ধের তখনকার চেতনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেছেন। তাঁরাও ওই শেরপুরের স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধার মতো জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের চেতনা তুলে ধরেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমার ধর্ম পরায়ন বাবা এবং চাচারাও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা যে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা লালন করতেন না, এটা বুঝার জন্য আমার আর কোনো প্রমাণের দরকার নেই।’ 

আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের চেয়ারম্যান সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলি সহস্রাধিক পৃষ্ঠার শেকড়সন্ধানী একটি ঢাউস বই লিখেছেন। বহুল প্রশংসিত সেই বইটির নাম ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’। 
“ আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোজে ” এই বইটিতে তথ্যপ্রমান দিয়ে অনেক আলেমের ১৯৭১ সালে তাদের মুক্তিযুদ্ধের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বইটি আল-ইসহাক প্রকাশনী, ৩৭, নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। সারাজীবন সংগ্রহে রাখার মত একটি বই। বইটির দাম ৪০০ টাকা এ বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের ইতিহাস। এ চেতনায় শত শত আলেমের অস্ত্র তুলে নেবার রোমাঞ্চকর ইতিবৃত্ত। বইটির প্রকাশনা উৎসবে আমন্ত্রিত দেশের প্রবীণ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন স্পষ্ট বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ইসলামের কোনো বিরোধ নেই। ঢালাওভাবে আলেমদের কিংবা টুপি-দাড়ি দেখলেই রাজাকার বলা স্বাধীনতার চেতনা নয়।

বঙ্গবন্ধু মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তার শুরুতেই পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। সেখানে যে মাওলানা সাহেব কুরআন তিলাওয়াত করেছিলেন তাঁর ছোট ভাই স্বনামখ্যাত লেখক অনুবাদক মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদীর মুখে তার গৌরবদীপ্ত বর্ণনা শুনেছি। বঙ্গবন্ধুর যে ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন সেখানে তাঁর শেষ উক্তি ছিল, ‘...এদেশের মানুষকে মুক্ত করেই ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’ এই ‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দের মধ্যেও তাঁর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভরসার চেতনা ফুটে ওঠে। তাঁর বক্তব্য থেকেও তো কখনো মুক্তিযু্দ্ধকে ইসলামের বিপক্ষে যুদ্ধ বলে মনে হয় নি। 

যে দেশের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধের প্রেরণা ছিলেন, যে দেশের জেলখানায় তিনি বিনা বিচারে ৯ মাস বন্দি ছিলেন, সে দেশের প্রতি তিনি প্রসন্ন হতে পারেন না। অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তিনি পাকিস্তানে ওআইসির সম্মেলনে যোগদান করেন। নিজের ক্ষোভ ও কষ্ট মনে পুষে রেখে তিনি এতে যোগদান করেন কেবল ‘উম্মাহ চেতনায়’ উদ্বুদ্ধ হয়ে। এটিও তার ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক মানসিকতাকে সপ্রমাণ করে।

আমার ব্যক্তিগত পড়াশোনায় দেখেছি পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরাম এমনকি বিশ্বের শীর্ষ আলিমগণও এই যুদ্ধকে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের বৈধ ও উচিত লড়াই বলে আখ্যায়িত করেছেন। পাকিস্তানের বিশ্বখ্যাত আলেম সাবেক বিচারপতি মুফতি তাকী উসমানীর বিশ্বভ্রমণকাহিনীর বই ‘জাহানে দীদাহ’–এর বাংলাদেশ ভ্রমণ অংশে এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক স্কলার ড. ইউসুফ আল-কারযাবীর ভ্রমণকাহিনীর বাংলাদেশ অধ্যায়েও এ সত্যের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। তাঁরা সবাই মুক্তিযুদ্ধকে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ বলেই আখ্যায়িত করেছেন।

অবশেষে প্রার্থনা, আল্লাহ বাংলাদেশের মানুষ ও তাদের ঈমানকে হেফাযত করুন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ইসলামের সেবক ও রক্ষক বানিয়ে দিন। আমীন।

ইসলামী দৃষ্টিকোণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
-আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

0 comments