শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Labels: , ,

বদরাগ ও সূরা নাস

‘রাগ হলে আমার লজিক্যাল সেন্স হারিয়ে যায়। অদ্ভুত সব কারণ একটার উপর একটা যোগ হতে থাকে। আমি নিজের মধ্যে বুঝতে পারি, আমি রাগ করছি কারণ আমার মধ্যে একটা হেরে যাওয়া অনুভূতি হচ্ছে। আমি নিজের মত করে একটা কিছু ভেবে রেখেছিলাম, কিন্তু বাস্তবে তেমন করে হয়নি। আমি হেরে যাচ্ছি, আমার কথা কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা, আমার সুযোগ সুবিধার দিকে কারো খেয়াল নেই… আমার উপর অন্যায় হলে দেখার কেউ নেই..’
উপরের কথাগুলো একটু অদল বদল করে দিলে প্রত্যেকেই নিজের ছায়া খুঁজে পাবেন। রাগ এমন এক জিনিস, তখন কে যে কী থেকে কী হয়ে যায়, কোন ঠিকঠিকানা থাকেনা। রাগ আর মাতাল অবস্থার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখি না। যে মাদক নেয়া থামাতে পারে না, তাকে আমরা বলি, ওর নিজের উপর কন্ট্রোল নেই। যে রাগ হলে শান্ত হতে পারেনা, তাকেও আমরা বলি, ওর কন্ট্রোল থাকেনা। আফসোস, মাদকাসক্ত কে আমরা দেখি ঘৃণার চোখে, আর বদরাগ কে দেখি কিঞ্চিৎ প্রশ্রয়ের চোখে।

কেন এভাবে রেগে যাই আমরা? আগের কোন রাগকে ট্র্যাক করতে পারবেন? এখানে রাগ বলতে আমি কিন্তু ‘অযৌক্তিক রাগ’ বুঝাচ্ছি। নিজের উপর অন্যায় হলে যে রাগ হয়, সে রাগের কথা বলছি। যে রাগ কমানোর জন্য মানুষ মেডিটেশনের দ্বারস্থ হয়, ডাক্তারের কাছে মুখ কাঁচুমাচু করে বলে, ‘দেখেন ত ডাক্তার সাহেব, আমার প্রেশারটা কি বেশি দেখে এত রাগ উঠে?’, সেই রাগের কথা বলছি। আমার রাগের ৯০%ই তৈরি হয় ‘এটা অন্যায়’ – এই চিন্তা থেকে। এই যেমন বন্ধুরা সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছি, এর মাঝে একজন বলা নাই কওয়া নাই শেষ মুহূর্তে পিছু হটল। হয়ে গেলাম রাগ, ‘তার কি এইটা উচিৎ হইসে?’ বাসায় গুরূত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত আমাকে জিজ্ঞাসা ছাড়াই নিয়ে ফেলল। রাগ, ‘আমি কি কেউ না?’ গ্রুপে মিলে কোন কাজ করছি, একজন ফাঁকিবাজি করল। হয়ে গেল মেজাজ খারাপ, ‘ফাইজলামি পাইসে?’ প্রত্যেকবারই হয় ‘আমার’ কমফোর্ট নষ্ট হয়েছে, নয়ত ‘আমার’ ইগো হার্ট হয়েছে, অথবা ‘আমার’ তৈরি করা প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হয়নি। প্রত্যেকটাই খুব আত্মকেন্দ্রিক কারণ, কিন্তু আমি যখন রেগে যাচ্ছি, তখন আর স্বার্থপরতার ওই দিকটা আর চোখে পড়ছে না, মনে হচ্ছে, আমি বৃহত্তর স্বার্থে অন্যায়ের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে রাগ দেখাচ্ছি। অথচ এই ঘটনাটাই অন্যের বেলায় ঘটলে হয়ত আমি মিষ্টি মিষ্টি হেসে ধৈর্য ধরার উপদেশ দিতাম। এ রকম ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, হীন একটা চিন্তাকে মনের ভেতর মহৎ বানিয়ে ফেলছে কে?


সূরা নাস এ আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন শয়তানের অনিষ্টকর কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে (মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস।) শয়তান আমাদের কুমন্ত্রণা দেয় – এটা কি আমরা আসলেই বিশ্বাস করতে পারি? মাঝে মধ্যে পারি, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আমাদের যুক্তিবাদী মন বিশ্বাস করতে চায়না কোন জ্বীন ভূত এসে কুবুদ্ধি দিচ্ছে, আর সেটার ফল আমাদের কাজে এসে পড়ছে। শয়তানকে নিয়ে কারো সাথে রিয়েলিস্টিক আলোচনা করার চেষ্টা করে দেখুন, হাসতে হাসতে আপনাকে উড়ায় ফেলবে, স্কিজোফ্রেনিক রোগীও বানায় ফেলতে পারে। শয়তানকে নিয়ে আমি প্রায়ই চিন্তাভাবনা করি, তারপরেও, এশার নামাজ একটু দেরি করে ফেললে যখন ভী-ষ-ণ আলসেমি লাগে, ঘুমে মনে হয় পড়েই যাব, আর কষ্ট করে নামাজ পড়ে ফেলার সাথে সাথে ঘুমও পালায় – তখনও আমার মনে হয়না এটা শয়তানের কারসাজি। শয়তান এখনও আমার কাছে সামহোয়াট ইমাজিনারি কিছু। আমার বাসা, ল্যাব, ল্যাপটপ – এরা যেমন খুব বাস্তব, শয়তানকে ততটা বাস্তব ধরতে মনের মধ্যে কেমন কেমন যেন লাগে।

রাগের বেলায় শয়তানের ভূমিকা বলার আগে সূরা নাসের পরের লাইনটা আলোচনা করে নেই। আল্লাযি ইয়ুওয়াসয়িসু ফী সুদুরিন নাস, সেই শয়তান, যে মানুষের বুকের মধ্যে বসে কুমন্ত্রণা দেয়। ‘ইয়ুওয়াসয়িসু’ হচ্ছে ঘটমান বর্তমান ক্রিয়াপদ। চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে। কোন থামাথামি নেই। শয়তান বুকের মধ্যে বসে থাকবে, একটা ফুট কাটবে, আপনি তাকে ধমক দিয়ে থামাবেন, সে একটু দমে যাবে, তারপর মুখটা বাড়ায় আবার আরেকটা কিছু বলবে.. আবারও, আবার… ! আপনি যখন কোন কারণে অফেন্ডেড, আপনার মনের মধ্যে এমনিতেই কিছু নেগেটিভ চিন্তা আছে অফেন্ডারের প্রতি। এখন শয়তান করবে কি, ওই ভদ্রলোকের/ভদ্রমহিলার সাথে আপনার বিগত জীবনে যা যা খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে সব ছবির মত সামনে তুলে ধরতে থাকবে। একটা করে ছবি দেখবেন, মেজাজ খারাপ বাড়তে থাকবে। শুধু এই না, ছবির নিচে ক্যাপশনের মত একটা এক্সপ্লানেশন ও থাকবে, ও এইটা করসিল, দেখ, সে তোমার জন্য কক্ষণো কেয়ার করে নাই। সবসময় তুমিই করে গেছ… ইত্যাদি ইত্যাদি। কারো উপর রাগ হওয়ার পর তার ভালমানুষির কথাগুলি কি আপনার কখনো মনে পড়ে? আমি কারো উপর রাগ হয়ে আমার স্বামীর কাছে ঝাল ঝাড়লে সে তার ভাল দিকগুলি মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আমার তখন আরো রাগ হয়, ‘আমি বলতেসি খারাপ আর তুমি ভাল দিক দেখাচ্ছ! আমার ত এখন নিজেকে আরো বেশি খারাপ মনে হচ্ছে!’ কী ভয়ংকর ইগো!


যাই হোক, পার্সোনাল ডিসকমফোর্ট আর শয়তানের ওয়াসওয়াসা – এ দুটোই আমাদের জন্য অনেক, তার উপর আরো আছে পারিপার্শ্বিকতার চাপ। আশেপাশের মানুষের উস্কানিতে ঘটনা আরো খারাপের দিকে গেছে – এ রকম দেখেছেন কখনো? আল্লাহ সূরা নাস এর শেষ লাইনে বলেছেন ‘মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস’, খারাপ জ্বীন ও মানুষের কুমন্ত্রণা। ওয়াসওয়াসা শুধু বুকের ধারেকাছে ওঁৎ পেতে থাকা বেহায়া শয়তানটাই দেয়না, তার সাঙ্গোপাঙ্গো যারা অন্যদের ভেতর বসে আছে, তারাও একযোগে বুদ্ধি দিতে থাকে, এটা বল, ওটা মনে করিয়ে দাও। ফলাফল… থাক, নাই বা বলি। রাগ করে মানুষ বাসনকোসন ভাঙে, হাত পা ভাঙে। সম্পর্ক ভাঙে, ভাঙে আল্লাহর উপর বিশ্বাসও। তারপর একটা সময় ফলাফল দেখে কান্নায়ও ভেঙে পড়ে।

ফেসবুকে এক ছোট বোন লিখেছিল, মানুষকে চেনার সবচেয়ে ভাল উপায় হল তাকে রাগিয়ে দেয়া। এমনিতে ফেরেশতা, আর রাগিয়ে দিলে মুখের ভাষা শয়তান টাইপ হয়ে যায়। আমি এই বক্তব্যের সাথে একমত না। রাগিয়ে দিলে মুখের ভাষা শয়তান টাইপ হয়, কারণ সে তখন শয়তান আর মানুষের ওয়াসওয়াসা দ্বারা প্রভাবিত হয়। রাসুলুল্লাহ (স) কখনোই মানুষের রাগের অবস্থা বিচার করতেন না। এমন ভাব করতেন, যেন এমন কোন ঘটনা ঘটেই নি। তিনি বুঝতেন, এটা অন্য যে কোন প্রবৃত্তির মতই মানুষের একটা দুর্বলতা। তাই উনি সবচেয়ে শক্তিশালী বলেছেন সেই ভাই বা বোনকে, যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।


রাগ হলে কী করতে হবে? বলব না। যে সত্যিকারের আন্তরিক সে খুঁজে বের করে নিক। আমি চাই মানুষ বদরাগ কে মাদকাসক্তির মতই এক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করুক। বদরাগের কারণে যাদের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে তারা বিষয়টার ভয়াবহতা নিয়ে অন্যদের সাথে কথা বলুক, মানুষ যেন আরো সচেতন হয়। Domestic violence এর অনেকটুকুই আসে বদরাগ থেকে। ঠান্ডা, সুস্থ মাথায় ভায়োলেন্স করে যাচ্ছে, এরকম কেস আপনি কমই পাবেন। রাগ নিয়ে চিন্তা করুন। যে বদরাগী, সেও, যে ভুক্তভোগী, সেও। চট করে রেগে যাওয়া, লম্বা সময় রাগ ধরে রাখা – এগুলো পরিবার, সমাজের বড়সর ক্ষতি করে ফেলছে। এখন শুনি রিকশাওয়ালার সাথে ঝগড়া হলেই কষে চড় লাগিয়ে দেয় স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা। রাগ কি কেবল স্টুডেন্টদেরই আছে? আল্লাহ না করুক, এইসব অন্যায় আর অসম্মানের খেসারত যদি আপনার কোন ভাই/বোনের জীবন/সম্মানের বিনিময়ে দিতে হয়, তখন কি একচেটিয়া রিকশাওয়ালাদের দোষারোপ করে পার পাওয়া যাবে?

লেখাটা শেষ করি আমার খুব প্রিয় একটা হাদীস বলে। রাসুলুল্লাহ (স) এর সামনে এক সাহাবীর সাথে আরেকজনের ঝগড়া হচ্ছিল। সাহাবী নম্রভাবে জবাব দিচ্ছিলেন আর ওইপক্ষ একনাগাড়ে গালিগালাজ করেই যাচ্ছিল। তাই দেখে রাসুলুল্লাহ (স) মুচকি মুচকি হাসছিলেন। একটা সময় আর টিকতে না পেরে সাহাবীও উঁচু গলায় জবাব দিতে থাকল, তখন রাসুলুল্লাহ (স) সে জায়গা থেকে সরে গেলেন। ব্যাপারটা সেই সাহাবী লক্ষ করলেন, উনি এসে রাসুলুল্লাহ (স) এর কাছে জানতে চাইলেন, উনি অসন্তুষ্ট হওয়ার কারণ কী। রাসুলুল্লাহ (স) তখন উনাকে জানালেন, তুমি যখন চুপ ছিলে তখন এক ফেরেশতা তোমার হয়ে জবাব দিচ্ছিল। আর তুমি যখন গলা উঁচু করলে, তখন ফেরেশতার বদলে শয়তান এসে জায়গা করে নিল, আর তোমার হয়ে জবাব দিতে থাকল। তাই দেখে আমি চলে এলাম।

লিখেছেনঃ নূসরাত রহমান 

0 comments
Labels: ,

রাগকে সংযত করা : নুমান আলী খান

জীবনে আমি নিজের যেই আচরণের কারণে অনেক বেশি করে আফসোস করেছি, তার মধ্যে রাগ জিনিসটা একদম উপরের দিকে অবস্থান করে। জীবনের বিশাল একটা সময় রাগ হলে অসহায় হয়ে যেতাম, আমি চাইনা এমন কাজগুলো ধুম করে করে বসতাম, আর ফলাফলগুলোকে সামলাতে সামলাতে ভালো সময় পার হয়ে যেতো। রাগ করে এমন আচরণ হয়ে যায় যে — প্রিয়জন/বন্ধুদের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। অনেকে সহজেই আরো যা করেন তা হলো গ্লাস ভাঙ্গা, খাতা ছিঁড়ে ফেলা, কলম জানালা দিয়ে ফেলে দেয়া, মোবাইল ফোন ছুঁড়ে ফেলা এবং আরো কত কী!

নুমান আলী খানের “controlling anger” নামের আলোচনাটা দেখার পর আমার চিন্তা অনেক বদলে গিয়েছে। রাগ হলে এখন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে পারি, নিজের আয়ত্বে থাকতে পারি অনেকটাই। সবচাইতে বড় কথা, বুকে যন্ত্রণার উপশম হয়ে যায় সহজেই। আলোচনা করতে গিয়ে তিনি পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা আশ-শুরার ৩৬-৪০ নাম্বার আয়াত উল্লেখ করেছেন।

অতএব, তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ মাত্র” [১] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, দুনিয়ার জীবনে আমাদের তিনি যা দিয়েছেন তা কেবল ভোগের উপকরণ। এখানে আল্লাহ “মাতা’আ” শব্দটি উল্লেখ করেছেন, আরবিতে যার অর্থ বোঝায় এমন একটা উপকরণ যা আমার আছে, কিন্তু সেইটা উপভোগ করতে পারায় আমি বিশেষ আনন্দ পাইনা। যেমন একটা ব্রাশ। ব্রাশ হাতে নিয়ে আমি এমন অনুভব করিনা যে আমার ব্রাশটা দারুণ। কারণ এর উপযোগিতা অল্প সময়ের জন্যই।
আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী” [২] — আল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। অর্থাৎ আমাদের এই ক্ষণস্থায়ী উপকরণসমূহ, যা পৃথিবীতে তিনি দিয়েছেন, তার চাইতে আল্লাহর কাছে যা আছে/ তিনি যা রেখেছেন আমাদের জন্য তা অনেক উন্নতমানের এবং তা স্থায়ী। এখানে তিনি উল্লেখ করেছেন “আবকা” শব্দটি, যা কোনকিছুর তুলনামূলক দীর্ঘস্থায়িত্ব বুঝায়। আমাদের পৃথিবীর আনন্দের জিনিসগুলো কিছুই বেশিদিন থাকে না। যেমন সুন্দর একটা মার্সিডিজ বেঞ্জ হোক, গুলশানের একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি হোক, আমার নতুন আইফোন হোক — সবই একসময় ক্ষয় হয়, চাকচিক্য-উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর কাছে যা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাবে না, বরং সেগুলো স্থায়ী।
কিন্তু সেই জিনিসগুলো কারা পাবে? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা জানিয়ে দিয়েছেনঃ “তাদের জন্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে। যারা বড় গোনাহ ও অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাম্বিত হয়েও ক্ষমা করে” [৩] যারা আসলেই বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে যে পৃথিবীর এইসব চাকচিক্যময় ভোগের উপকরণের চাইতে আল্লাহর কাছে যা আছে তা অনেক স্থায়ী আর উন্নতমানের। আর সেই দৃঢ় বিশ্বাসের ফলে যারা জীবনে যারা পথ চলতে পারে। আল্লাহ এই প্রসঙ্গে কিছু গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছেন যা বিশ্বাসীদের থাকতে হবে।
– বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
– অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকা
– ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করা
আমরা যদি আল্লাহর কাছে থাকা দীর্ঘস্থায়ী আর উন্নত আনন্দের উপকরণগুলো চাই, তাহলে আমাদের বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এমন নয় যে, বড় গুনাহ করতে করতে ছোট গুনাহ নিয়ে আলোচনা করবো। বরং এখানে প্রায়োরিটি হিসেব করতে হবে, বড় গুনাহগুলো থেকে দূরে চলে যেতে হবে। অশ্লীল কাজ থেকে দূরে চলে আসতে হবে। আমার হয়ত এখন আজেবাজে কিছু দেখতে ইচ্ছে করতে পারে, কিন্তু সেই ইচ্ছাটাকে দমন করতে হবে। যদি অনুমুতি নেই এমন কারো সাথে কথা বলতে/যোগাযোগ করতে ইচ্ছে করে, সে ইচ্ছেটাকে দমন করতে হবে। হয়ত আমাদের কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে, যেখানে গেলে অশ্লীল সময়ে, বিষয়ে সময় কাটবে — সেটাকে দমন করতে হবে। আর এই দমন করতে গিয়ে যেই যুদ্ধ নিজের সাথে সেটাই আমাদের পার্থিব যোগ্যতাকেও বাড়িয়ে দেবে, ফলে আমাদের আত্মার শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
এরপর আল্লাহ বলেছেন, রেগে গেলেও যারা ক্ষমা করে। এখানে আল্লাহ কিন্তু বলেননি, রেগে গেলে চুপ থাকে বা রেগে গেলে শান্ত থাকে। বরং তিনি বলেছেন রেগে গেলেও ক্ষমা করে দেয়ার কথা। সুবহানাল্লাহ! একজন মুমিন বান্দার কাছে আল্লাহ ক্ষমাশীলতা আশা করেন। অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করার অনুমুতি আল্লাহ দিয়েছেন, কিন্তু সেটার উদ্দেশ্য হলো সমাজে ন্যায়বিচার স্থাপন করা। কিন্তু যারা প্রতিশোধ না নিয়ে বরং আল্লাহর জন্য ক্ষমা করে দিবে, তাদের জন্য আল্লাহ পরের আয়াতে একটা সুসংবাদ দিয়েছেন।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনঃ “যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন নাই।” [৪] অর্থাৎ, ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং যে ক্ষমা করে করে, তার পুরষ্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। কেমন এই পুরষ্কার? সেকথা পূর্ববর্তী আয়াতেই আল্লাহ জানিয়েছিলেন — যা হলো উৎকৃষ্ট এবং স্থায়ী। আর এই পুরষ্কার আল্লাহ বরাদ্দ রেখেছেন তাদের জন্যই যারা আল্লাহর উপর প্রকৃতই ভরসা করে, তার প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং ব্যক্তিগত ক্ষতিতে রেগে না গিয়ে ক্ষমা করে দেয়। সেই পুরষ্কার তো শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার!!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে তার নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করার যোগ্যতা এবং তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করে নিন, যাদের তিনি ভালোবাসেন, পছন্দ করেন। আল্লাহ আমাদের রেগে গেলেও ক্ষমা করার যোগ্যতা দান করুন যেন এই কাজের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি আমরা অর্জন করতে পারি, তার পুরষ্কার লাভ করতে পারি। আমিন।
নির্ঘন্টঃ
[১] [২] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৩৬
[৩] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৩৭
[৪] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৪০
নুমান আলী খানের ১০ মিনিটের লেকচার, ইউটিউব ভিডিও

0 comments