শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Labels: , ,

ক্ষমার মাস রামাদান - যখন তারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন আমি একদম কাছে

●|● ক্ষমার মাস রামাদানঃ পর্ব ০৫ ●|●
এক্ষেত্রে তারা হচ্ছে আল্লাহর দাস। এমন হতে পারে এরা হয়তো আল্লাহর ইবাদত করেই না, কিন্তু তারপরও তারা ইবাদ। এখন তারা কার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল, দেখি আপনাদের মনোযোগ কেমন আছে, তারা কি আল্লাহর কাছে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিল নাকি রাসূল (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল। তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল। এখন আমি অর্থ টা আবার বলি, যখন তারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তাহলে তাদেরকে বল, আমি নিকটে। আয়াতে কিন্তু বলা হয়নি তাদেরকে বল, আয়াতে বলছে ‘ফাইন্নি কারীব’, যখন তারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন আমি একদম কাছে, তখন আমি একদম কাছে। কোন জিনিসটা বলা হয়নি? তাদেরকে বল, ফাকুল্লাহুম ইন্নি কারীব। কিন্তু এখানে কোন ফাকুল্লাহুম নেই, কোন তাদেরকে বলও নেই। কেন? লোকজন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করতে এসেছিল, হয় না আমাদের সময়ে লোকজন আলেমের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে আল্লাহ কি আমার দুয়া শুনবে? আমার অনেক ভুল হয়, আমার অনেক নামাজ বাদ গেছে, আল্লাহ কি তারপরও আমার দুয়া শুনবে? আল্লাহ কি আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে? এগুলো মানুষ আলেমকে জিজ্ঞাসা করে, আর ওই ক্ষেত্রে সাহাবীরা রাসুলুলাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞসা করেছিলেন। আল্লাহ নিজেই সরাসরি উত্তর দিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দিয়ে বলালেন না। উনি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) কে দিয়ে নয়, উনি আপনার সাথে, আমার সাথে সরাসরি কথা বলা শুরু করেছেন। ফাইন্নি কারীব। আমি কাছেই। আমি এত কাছে যে আমি তোমার সাথে কথা বলছি। আমি এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কেও বলছি না তোমার সাথে কথা বলতে, আমি সরাসরি তোমার সাথে কথা বলবো। এখানেই কুরআনের সৌন্দর্য।
লোকজন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আসলো জিজ্ঞাসা করতে আর আল্লাহ বলেননি যে আপনি ওদেরকে গিয়ে বলুন, বরং উনি ঠিক করলেন যে উনি নিজেই বলবেন। আমি খুব কাছে, তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না? কেন আমি বললাম তুমি বিশ্বাস কর না? বললাম ইন্নি শব্দটার কারণে, ইন্নি মানে বাংলায় অবশ্যই, কোন কিছু নিঃসন্দেহে বোঝাতে ইন্নি ব্যবহার হয়। তাই কেউ যদি কোন ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তখন ইন্না ব্যবহার করা হয়। আল্লাহ এখানে বলছেন কক্ষনোই আমি কাছে নেই এই সন্দেহ করো না।। কেন তুমি সন্দেহ করছ যে আমি কাছে নেই। কেন তুমি ভাবছ যে আমি তোমার থেকে দূরে সরে যাব, তুমি আমার থেকে সরে গেছ, আমি না, তুমি সরেছো। তুমি আমার অবাধ্য হয়েছ, তুমি আমাকে ভালবাসা বন্ধ করেছো, আমি কক্ষনো তোমাকে ভালবাসা বন্ধ করিনি। তুমি দূরে সরেছো, আমি সবসময় কাছেই ছিলাম। আবার কারীব শব্দটাও, কারীব হচ্ছে ইসম সিফাহ, যার অর্থ আমি সবসময় আছি, পুরো বাক্যটা দাঁড়ায় অবশ্যই আমি সবসময় আছি কাছেই, আমার দাস এটা জানুক। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আলাহর কতগূলো নাম আছে? অন্তত ৯৯ টি। কত সুন্দর সুন্দর নাম আল্লাহর। তাই যখন মানুষ জিজ্ঞেস করল আল্লাহ সম্পর্কে, তখন তাদেরকে আল্লাহর কোন নামটা বলা সবচেয়ে বেশি জরুরী? উনার কোন গুনটা? যে উনি একদম কাছেই। কেন? কারণ যখন উনি কাছে আছেন আমাদের জন্য উনার সাথে কথা বলা সহজ হয়। কেউ যখন দূরে থাকে তখন আমরা তার সাথে কথা বলিনা। আর কেউ যখন কাছে থাকে আপনি তার সাথে কথা বলতে পারেন, যখন কেউ কাছে থাকে আপনি তাকে সম্মান পারেন।
আচ্ছা, এখানের কয়জন বাচ্চা স্কুলে আছে? ৪ জন। বাকীরা কি করে? আচ্ছা যাই হোক, যদি আপনি স্কুলে থাকেন আর টিচার ক্লাসরুমের বাইরে দিয়ে হেঁটে যায়, তখন কি আপনার আচরণে কোন পরিবর্তন আসে? নাকি আসে না? মিথ্যা বলবেন না আপনি মসজিদে আছন। বাইরে গিয়ে মিথ্যে বলুন...না না আমি মজা করছি। যখন টিচার কাছে থাকে আপনার ব্যবহার এরকম হয়, ধরুন আপনি একটি পরীক্ষা দিচ্ছেন, টিচার হেঁটে বেড়াচ্ছেন, আপনি কি আপনার পরীক্ষার খাতা একটু ঢেকে ফেলেন না? এমনকি ছাঁয়া দেখলেও কেঁপে উঠেন। বিশেষত যদি উনি আপনার টেবিলে হাত রাখে আর আপনার খাতারদিকে তাকিয়ে একটু ‘হুমম’ করেন ... মালাকুল মাউত (যমদূত) মনে হয়। আমি আমার স্টুটেন্ডদের সাথে এরকম করি, কারণ আমি তাদেরকে মানসিকভাবে টর্চার করতে পছন্দ করি। এটাই টিচিং এর সবচেয়ে বড় মজা, আপনি তাদেরকে নিয়ে খেলতে পারেন। আল্লাহ বলছেন যদি আমার দাস আমার সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে বলুন আমি একদম কাছেই আছি। কেউ যখন কাছে থাকে আপনি অন্য রকম আচরণ করেন, আপনি যখন আশেপাশে পুলিশ অফিসার দেখেন আপনি অন্যরকম আচরণ করেন। আপনি যখন দেখেন আপনার বস আশে পাশে আছে আপনি ভিন্ন আচরণ করেন, যখন জানেন টিচার কাছে, আপনি ভিন্ন আচরণ করেন, যখন আপনি দেখেন আপনার মা আশেপাশে আছে আপনি তখন আপনার বন্ধুদের সাথে ভিন্ন ভাবে কথা বলেন, যখন সে অন্য রুমে যায় তখন হয়তো আপনি বন্ধুর মুখে ঘুষি মারেন বা এই ধরনের কিছু করেন, কাছে থাকলে ভিন্নভাবে কথা বলেন। যখন আপনি অনুধাবন করবেন যে আল্লাহ নিকটে তখন আপনি সবসময়ের জন্য একদম ভিন্ন মানুষ হয়ে যাবেন। কারণ উনি সবসময় কাছে, ফাইন্নি কারীব। এখন উনি যদি সবচেয়ে কাছেই হন, এরপর উনি কি বলছেন? ‘উজিবু’ আরবিতে আজাবা মানে, উত্তর দেওয়া। এছাড়াও আরেকটি শব্দ আছে, ইস্তেজাবা, কুরআনের অন্য এক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন - فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ তিনি আজাবা লাহুম বলেননি, তিনি বলেছেন ফাস্তাজাবা লাহুম। তাদের প্রভু তাদের ডাকে সাড়া দিলেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে দুইটা শব্দ আছে আরবীতে আজাবা, আর ইস্তেজাবা। আজাবা দিয়ে বুঝায় যেটা সাথে সাথে হবে, যখন আপনি কোন দেরী করার ছাড়াই কাউকে জবাব দেন সেটাকে বলা হয়, ইজাবা। আর যখন আপনি সময় নিয়ে জবাব দেন সেটাকে বলা হয় ইস্তেজাবা। আল্লাহ বলছেন উজিবু এর মানে উনি কিভাবে দুয়ার উত্তর দেন? সাথে সাথে। কেউ কেউ দুয়া করে আর বলে, কখন আল্লাহ জবাব দিবেন? কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? আমি অসুস্থ, কখন আল্লাহ আমাকে সুস্থ করবেন? আমি চাকরী পাচ্ছি না, কখন আল্লাহ আমার চাকরী দিবেন। আমার বিয়ে হচ্ছে না, কখন আল্লাহ আমার বিয়ে দিবেন। আমার মা একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করছে, কখন আল্লাহ তার অন্তর টা পরিবর্তন করবেন। এর নাক লম্বা, তার চোখ বেশি ছড়ানো, এ জানেনা কিভাবে ঠিক মত চা বানাতে হয়, এসব করে আমার বিয়ে হচ্ছে না। আমার মা সব নষ্ট করে দিচ্ছে। ইয়া আল্লাহ কেন আমার মা এরকম করছে, আপনি তখন আল্লাহর কাছে দুয়া চান, আর আল্লাহ কি বলছেন? তিনি কখন সেটার জবাব দিবেন? সাথে সাথে।
ও আরেকটি কথা। এগুলো সব রামাদানের আয়াত, তাই না? তাই আপনি যদি সত্যি সত্যি চান আল্লাহ সাথে সাথে আপনার দুয়ার জবাব দিবেন, তাহলে কখন দুয়া করতে হবে? রামাদানে। আর আপনি যদি চান যে আল্লাহ আপনার কাছে আসবেন তাহলে আগে নিজে আল্লাহর কাছাকাছি হন, বেশি বেশি কুরআন পড়ুন, আর তারপর দুয়া করুন, কুরআন পড়ুন আর দুয়া করুন। কুরআন পড়ুন আর দুয়া করুন। রামাদানে আপনার এরকমটিই করা উচিত। যখন আপনি বেশি বেশি দুয়া করা শুরু করবেন, তখন রামাদান মাসটা উপভোগ করা শুরু করবেন। আর যদি আপনি বেশি দুয়া না করেন তাহলে আপনি রামাদান উপভোগ করবেন না। রামাদানের আনন্দটাই হচ্ছে দুয়ার মাঝে। অর্থাৎ উনি বলছেন উজিবু। আমি জবাব দিব। তারপর উনি বলেছেন دَعْوَةَ الدَّاعِ কি শক্তিশালী শব্দচয়ন!! পূর্বে বলেছিলাম কুরআন মাজিদে 'আমি' কখন ব্যবহার করা হয়? মনে আছে? অনেক বেশি ভালোবাসা এবং অনেক বেশি রাগ প্রকাশ করার সময়। এখানে কোনটা? অনেক বেশি ভালোবাসা। আমি জবাব দেই, আমি নিজে জবাব দেই, আর তা তাৎক্ষণিক ভাবেই দেই। এখন কার দোয়ার জবাব দেয়া হয়? আপনি ভাবতে পারেন যে অনেক বেশি দোয়া করে তার। আমি বছরে একবার দুইবার দোয়া করি। যখন আপনার পরীক্ষা থাকে তখন দোয়া করেন, ইয়া আল্লাহ আমার পরীক্ষা ...। আমিন। অথবা গাড়ি চালানোর সময় লালবাতি অতিক্রম করে গেলেন, আর বিশাল জরিমানা দিতে যাচ্ছেন, তখন দোয়া করেন এই বলে, ইয়া আল্লাহ ক্যামেরা এবং লাইসেন্স প্লেটের মাঝে কভার সৃষ্টি করে দাও। আমি যেন অথরিটি থেকে কোন মেসেজ না পাই, ইয়া আল্লাহ। তখন আপনার আল্লাহকে স্মরণ হয়। কেউ যদি অনেকবার দোয়া করে তাহলে 'দুয়া' শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কেউ যদি শুধু একবার দোয়া করে, সেটা প্রকাশ করতে ব্যবহার করা হয় ''দা'ওয়াতুন'' শব্দটি। دعوة শব্দটির শেষে তা মারবুতা নির্দেশ করে যে এটা মাত্র একবার ঘটে। যেমন ضرب এর অর্থ হলো প্রহার করা, কিন্তু ضربة মানে একবার প্রহার করা। أكل মানে খাবার, কিন্তু أكلة অর্থ একবারের খাবার। ة তা মারবুতা এটাকে একবারের জন্য বানিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেছে, دَعْوَةَ الدَّاعِ প্রার্থনাকারীর একবারের প্রার্থনাতেও আমি সাড়া দেই। লোকটি মাত্র একবারই দোয়া করল, আল্লাহ বলেন না যে সারা বছর কোথায় ছিলে? তুমি জীবনে কখনো সালাত আদায় করনি, মাত্র একবার দোয়া করলে, ভুলে যাও যে তোমার ডাকে সাড়া দিব।
আপনি যদি কোন অফিসের কর্মচারী হোন আর বছরে মাত্র একবার অফিসে নিজের চেহারা দেখালেন, আপনার চাকরি থাকবে না। তারা বলবে, কে আপনি? আমি এখানে চাকরি করি। কখন? আমি গত বছর চাকরি পেয়েছি। তো এখানে কি করছেন? আমি অ্যাঁ...অ্যাঁ ... এখন তো আসলাম! আমি কি আবার শুরু করতে পারি? আপনার বস কি বলবে, হ্যাঁ, সিওর। হ্যাঁ, এক্ষুনি আপনি শুরু করতে পারেন। আপনার জন্য কি একটা প্রমোশনের ব্যবস্থা করবো? না এটা হবে না। دعوة শব্দের মাধ্যমে আল্লাহ বলছেন যে, জীবনে একবার দোয়া করা ব্যক্তির জন্যও তিনি সাড়া দিবেন। নিজেকে এটা বলে বোঝাবেন না যে, আমার তো দাঁড়ি নেই, আল্লাহ আমার ডাকে সাড়া দিবেন না। কেবল গোঁফ রয়েছে, আল্লাহ আমার দু'আ কবুল করবেন না'। রামাদানে মুভি দেখতে পারব না, তাই আগে থেকেই তিনটির মত মুভি দেখে ফেলেছি। এখন আমি দু'আ করব? আল্লাহ তারপরও সাড়া দিবেন আপনার ডাকে। এটা শুনে আবার কেউ মুভি দেখতে যাবেন না। কখনও মনে করবেন না যে আল্লাহ আপনার দু'আয় সাড়া দিবেন না। যে কিনা একটিও দু'আ করে, আল্লাহ তার ডাকেও সাড়া দেন। এবার আপনি বলতে পারেন, আচ্ছা, লোকটি একটি দু'আই করেছে কিন্তু হতে পারে যে সে একজন খুব ভাল মানুষ। হতে পারে সে একজন সালেহ, একজন মু'মিন, হতে পারে তার অনেক তাক্বওয়া আছে কিংবা তার ইলম বেশি। এও হতে পারে যে সে তওবা করেছে। 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াত্‌তায়িবি', আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই যে তওবা করে। আল্লাহ তা বলেননি। তিনি বলেছেন, আমি সেই মানুষটিকে সাড়া দেই, 'দা'ওয়া', তার একটি দু'আতেই সাড়া দেই, 'আদ-দা'আ', যে ডেকেছে। এই মানুষটির উদাহারণ কীরূপ? সে কি করেছে? সে ডেকেছে। অন্যকথায়, আল্লাহ কি তার কাছ থেকে অন্য কোন গুণ আশা করেছেন? তিনি কি বলেছেন, দা'ওয়াতুল মুসল্লি? দা'ওয়াতুল মুত্তাক্বি? দা'ওয়াতুল মু'মিন? না! তিনি বলেননি যে আপনার তাক্ব্ওয়া থাকতে হবে, আপনার ইমান থাকতে হবে, বলেননি আপনার ইলম থাকতে হবে। এই দু'আয় বলেননি। কেন? কারণ, আল্লাহ এখানে সেইসব মানুষের সাথে কথা বলছেন যারা আল্লাহ-এর থেকে বহু দূরে চলে গেছে। এবং তিনি প্রথমেই তাদের বলছেন যে, দেখো আমি কাছেই, তুমি দূরে, আমি তোমার নিকটেই। এরপর তিনি তাদের বলেন, দেখো আমি জানি এই একটি দু'আ ছাড়া তোমাদের কাছে এই মুহুর্তে আর কিছুই নেই। ঠিক আছে। দাও, ঠিক আছে। দাও, আমাকে এই একটি দু'আই দাও। যদিও তুমি একজন দা'আ, শুধুই একজন আহ্বানকারী। তোমার জন্য আমার কাছে আর কোন বিবরণ নেই। আমি তোমাকে এখনো পর্যন্ত একজন সালেহ ডাকতে পারি না, মুসলিম ডাকতে পারি না, মু'মিন ডাকতে পারি না। আমি তোমাকে কিছুই ডাকতে পারি না। আমি শুধু তোমাকে ডাকছি একজন দা'আ, একজন আহ্বানকারী। সেটি কোন যোগ্যতাই নয়। শুধু তাই। তাই যথেষ্ট। শুধু আমাকে ডাকো। সুবানাল্লাহ! আল্লাহ এর পক্ষ থেকে কত বড় একটি আমন্ত্রণ!
আর এগোনোর আগে বলে রাখি, আমি বলেছিলাম, কখনো একজন বসের ৫০০ জন কর্মচারী থাকে। সে কি তাদের সকলের নাম জানে? না। বিশেষ করে সেই কর্মচারীকে যে তাকে পুরো জীবনে মাত্র কয়টি ই-মেইল পাঠিয়েছে? একটি ই-মেইল। কিভাবে সে তাকে মনে রাখবে? কর্মচারীটি যদি তাকে টেক্সট মেসেজ পাঠায়, তার তো ওর নাম সেইভ করা নেই। সে জানবে না নাম্বারটি কোথা থেকে এসেছে। আল্লাহ বলেননি, 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াতাদ্‌ দা'য়িন' তিনি বলেছেন, 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াতা আদ দা'য়ি'। এই শব্দটির মধ্যে থাকা আলিফ লাম, তাকে মা'রিফা বানিয়ে দেয়। অর্থাৎ,যথাযথ এবং নির্দিষ্ট করে দেয়। অন্যভাবে বলা যায়, যে কেউ আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ বলেননা যে কোন একজন শুধুই ডেকেছে। তিনি বলেন সেইজন আমাকে ডেকেছে, সেই নির্দিষ্ট মানুষটি। আপনি আল্লাহ এর কাছে নির্দিষ্ট। তিনি আপনাকে বিশেষভাবে, ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। কোন ডাক্তার আপনার নাম মনে রাখতে পারবে না যদি তাকে দিনে ১০০টি রোগী দেখতে হয়। সে আপনার নাম জানবে না। সে এভাবে বলে চেষ্টা করবে, "মুহাম্মাদ, কেমন আছ? চলে এস।" হাহাহা। সবাই মুহাম্মাদ, অন্তত সম্ভাবনা তো রয়েছে। সে আপনাকে নামে চিনতে পারবে না, আপনি জানেন। আমি মানুষের সাথে মিশি, ওয়াল্লাহি, আমি তাদের সাথে মিশি। তখন আমি বোল্টামোরে ছিলাম। একজন বয়স্ক ব্যক্তি আমার কাছে এলেন। বললেন, "বেটা কেমন আছ? আমার মনে পড়ে, তুমি যখন খুব ছোট ছিলে, তখন মসজিদের ভিতর ছোটাছুটি করতে।" আমি তখন মনে মনে ভাবছি, হায় আমি তো টেক্সাস থেকে। কিন্তু মুখে বললাম, "জ্বী, আমারও মনে আছে।" আমি কথা চালিয়ে গেলাম। হাহাহা। তার আসলে মনে নাই। মানুষ মনে রাখে না। আল্লাহ আয্‌ওয়াজ্জাল নির্দিষ্টরূপে পর্যন্ত চিনেন। আপনি হয়তো বলবেন, কোম্পানির সি.ই.ও কিভাবে আমার নাম জানবে। আমি তো শুধুই একজন নিরাপত্তাকর্মী। তার অবস্থান কত উঁচুতে আর আমি কত নিচু পর্যায়ে। কিভাবে সে আমার নাম জানবে? কিভাবে একজন প্রেসিডেন্ট তার দেশের একজন অধিবাসীকে চিনবে? কিভাবে সেটি সম্ভব! আপনারা সবাই যদি আমার কাছে এসে নিজেদের নাম বলেন, আমার কি মনে থাকবে? আমি জানি না। আমি জানি না। কারো কাছে যদি আমার ফোন নাম্বার থাকে,(প্লিজ আমার ফোন নাম্বার নিবেন না), কিন্তু যদি থেকে থাকে যদি আমাকে একটি এস.এম.এস পাঠান। আমার কাছে নাম্বারটি সেইভ করা নেই। আমি কি জানবো কে এটি পাঠিয়েছে? আমি জানব না কে পাঠিয়েছে। আমার কাছে শুধু একটি নামার রয়েছে। কোন নাম নেই। আমার কাছে কিছুই নেই। যখন আপনি আল্লাহকে ডাকেন, আল্লাহ বিশেষভাবে জানেন যে এক্স্যাক্টলি আপনি কে। এবং তিনি তৎক্ষণাৎ আপনাকে সাড়া দিতে চান। তিনি আপনার সাথে তখনই নতুন সম্পর্ক শুরু করতে চান। গতকাল যা হয়েছে, তা হয়ে গেছে। আজ থেকে শুরু করুন। আপনি আজই মুসলিম হয়ে উঠুন। আজ থেকেই আল্লাহকে ডাকতে থাকুন। 'উজিবুদ দা'ওয়াতাদ্‌দা'য়ি।'

0 comments
Labels: ,

বাংলাদেশের প্রায় লক্ষলক্ষ ফেসবুক ব্যবহারকারী ভুল পথে যাচ্ছে

কি যুগ আইলোরে ভাই,এখন ফেসবুকে মুসলিম হলে কমেণ্টে আমিন লিখতেই হয়,নইলে আমার জাত গেল বলে!
আবার নাকি এড়িয়েও যাওয়া যাবে না!

এছাড়াও জান্নাতের টিকিট এখন অনলাইনেও পাওয়া যাচ্ছে! আপনি জান্নাতে যেতে চাইলে ঘরে বসে কমেন্টে আমিন লিখলেই টিকিট কনফার্ম!

রেডিও গরম,রেডিও মুন্না, রেডিও সঙ্গী, রেডিও স্বদেশ এইরকম অসংখ্য পেইজে ফেসবুক ভরপুর।এদের লাইক এক দুই হাজার নয়। এদের লাইক সংখ্যা বিশ/ত্রিশ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত।

বাংলাদেশের প্রায় লক্ষলক্ষ ফেসবুক ব্যবহারকারী এদের পাল্লায় পড়ে ভুল পথে যাচ্ছে।এরা আবার অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষের দুর্বলতম দিক,আবেগ কে। ইসলামকে ব্যবহার করে এই কাজটি করছে সুনিপুনভাবে।

এদের স্ট্যাটাসগুলো যেরকম হয়ে থাকে তার কিছু নমুনা দেখুন-
১.একটি অসুস্থ বা রুগ্ন শিশুর ছবি দিয়ে বলবে কেউ আমীন না লিখে যাবেন না।
২.আল্লাহ তায়ালার নাম অমুক যায়গায় এখানে সেখানে পাওয়া গিয়েছে।
৩.সব পুড়ে গেছে অথবা পানিতে তলিয়ে গেছে কিন্তু কোরআন,আল্লাহর নাম আর মসজিদ রয়ে গেছে।
৪.হিজাব পরা কোনো আরব রমনীর ছবি দিয়ে বলবে এই মুসলিম বোনটির জন্য কতগুলা লাইক।
৫. কখনো শুদ্ধ কখনো জাল হাদিস ব্যাখ্যা ছাড়া তুলে ধরে বলবে সবাই লাইক দিন যদি জান্নাতে যেতে চান।
৬.কখনো মিয়া খালিফার ইসলাম গ্রহনের খবর,কখনো টনি ব্লেয়ারের শালির/অংসাং সুচির/এই বোন/ভাই টির ইসলাম গ্রহনের খবর।
৭.আদম আঃ এর পায়ের ছাপ, মা-ফাতিমার শাড়ি।
৮.এমনকি রাসুল সাঃ কে ব্যবহার করতেও এরা ছাড়েনা (নাউজুবিল্লাহ)। বিভিন্ন নবী রাসুলদের মাজার/কবরের ছবি।

এদের সব পোস্টেই থাকে এডিট করা কোন না কোন ছবি।আর শেষে থাকে
*মুসলিম হলে কমেন্টে আমীন লিখুন
*লাইক না দিয়ে যাবেন না।
*এই খবরটি বেশি বেশি শেয়ার করুন।
*জান্নাতে যেতে চাইলে আমিন /সুবনাল্লাহ না বলে যাবেন না!

অথচ সরলমনা মুসলিমেরা না বুঝেই এসবে লাইক দিয়ে থাকেন। শেয়ার করে থাকেন। তারা জানেন না যে এটি চরম মিথ্যে। অজান্তে তাঁরা এভাবেই ইসলামের ভুল চিত্র তুলে ধরছেন সবার সামনে। অথচ তাঁরা ভাবছেন এটি করে বুঝি পূণ্য হলো। তারা জানেন না যদি এসবেই আপনি সওয়াব পেতেন তাহলে ইসলামের মত একটি পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থায় অবশ্যই এসবের কথা উল্লেখ থাকতো যে, আধুনিক কালে বা শেষ জমানায় এরকম কিছু পেইজ আসবে এবং তোমরা তাতে লাইক কমেন্ট শেয়ার দিয়েই পূণ্য কামিয়ে নিতে পারবে,জান্নাতে যেতে পারবে।

একটি পেইজ কিংবা ফেইক আইডি থেকে শুধুই হাজার হাজার লাইক পেতে কেউ একাজ করে না। তাদের উদ্দেশ্য অবশ্যই দৃষ্টি আকর্ষন করা।তবে শুধু সেজন্যই তারা এই পন্থা অবলম্বন করে না।ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামকে বিতর্কিত করা এবং অন্য ধর্মের কাছে খারাপভাবে একে উপস্থাপন করাটাও এদের একটা উদ্দেশ্য।এছাড়া মানুষকে ইসলামের আসল শিক্ষা থেকে দূরে রেখে ধর্মপ্রাণ মানুষকে যারা স্বল্প শিক্ষিত কিংবা প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেই অথচ ফেইসবুক চালাতে জানেন এমন মানুষদেরকে টার্গেট করেই এসব করছে ওরা। এদের উদ্দেশ্য অনেক সুদূরপ্রসারী।
এদের মূল উদ্দেশ্যটি হলো, মানুষকে ইসলামের কাছ থেকে দূরে রাখা এবং ভুল পথে পরিচালিত করা বিশাল সংখ্যক মুসলিমদেরকে। যেন তারা অশিক্ষিত থেকে যায় এবং সত্যিকারের শিক্ষা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারে। এসব পেইজের অ্যাডমিনগুলো বেশীরভাগ নাস্তিক এবং বিধর্মী।

তাই সবাই একটু সতর্ক হোন।এইসব পেজে লাইক কমেন্ট দেয়া থেকে বিরত থাকুন।লাইক,কমেন্ট, শেয়ার দিয়ে ওদের প্রচারণার অংশ হবেন না।

এগুলা দেখামাত্র রিপোর্ট করেন,পারলে শেয়ারকারীকে ব্লক মারেন।

আর যাইবার কালে আরেক টি কথা, এই লেখাটি ভাল লাগলে বেশি বেশি শেয়ার দিয়ে সবাইকে  জানার সুযোগ দিন!

(Cltd)

0 comments
Labels: ,

ভালো মা হওয়া যেমন সওয়াবের, ভালো শাশুড়ি হওয়াও তেমন সওয়াবের।

ভালো মা হওয়া যেমন সওয়াবের, ভালো শাশুড়ি হওয়াও তেমন সওয়াবের।

আমার দাদী সম্পর্কে আম্মু একটা কথা বলে, “তোমার দাদীর মতো সোনার মানুষ লাখে-কোটিতে পাওয়া যাবে না।”

আমার দাদীর নয় ছেলে। নয় ছেলের ঘরে নয়টা বউ। এই নয় বউ নিয়ে আমার দাদী চলেছেন। কারো সাথে উনার কোনদিন কিছু নিয়ে লাগেনি। উনি সবাইকে ভালোবাসতেন, সবাই উনাকে ভালোবাসত। আমার আম্মু দাদীর সাথে বসে দীর্ঘ সময় ধরে গল্প করত। ছেলেদের হক, বউদের হক সম্পর্কে আমার দাদী ছিলেন সচেতন।

আমার দাদী লম্বা, ফর্সা ছিলেন। অর্থ্যাত প্রচলিত অর্থে সুন্দরী। আমার বাবাও লম্বা, ফর্সা। এদিকে আমার আম্মু ছোটখাট শ্যামলা মানুষ। অর্থ্যাত প্রচলিত অর্থে সুন্দরী না। আম্মুর বিয়ের পর একবার গ্রামের কোন এক আত্মীয়া আমার দাদীকে বলছিলেন, “বুবু, আপনার এত সুন্দর ছেলের জন্য এটা কী মেয়ে আনলেন?” দাদী একটু চুপ থেকে বললেন, “সে সাদা সুন্দর না, তবে সে লাল সুন্দর।” নিজের ছেলের বউকে নিজে তো কখনো কালো বলেনইনি, মানুষ বলতে আসলে সেটাও শুদ্ধ করে দিয়েছেন।

আমার আম্মু বড় হয়েছে শহরে। আর আমার দাদার বাড়ি গ্রামে। আম্মুর বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়ি গেলে ফেরার সময় দাদী বলেছিলেন, “আমি হয়ত তোমার জন্য অনেক কিছু করতে পারি নাই, বাড়ি ফিরে মা-কে কিছু বলো না।” অথচ আম্মু বলে, উনার বউ শহরের মেয়ে এটা বুঝে উনি বউয়ের জন্য ভালো ব্যবস্থা করতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন।

আমরা নাতি-নাতনিরাও দাদীকে অনেক ভালোবাসতাম। আমার চাচাত বোনরা শ্বশুরবাড়ি থেকে নাইয়র গেলে আগে দাদীর ঘরে গিয়ে উনার সাথে দেখা করত তারপর যে যার বাবার ঘরে যেত। আমরা উনাকে ভালোবাসি কারণ উনি আমাদের কারো মা-কে কখনো কষ্ট দেননি।

এখন বিয়ে হয়েছে, বিবাহিত সার্কেলে মিশি। একসাথে বসলে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে কথা ওঠে। আমি এই বিদেশে এসেও বলি আমার দাদী অনেক ভালো ছিলেন। আমার আম্মু যেমন আমাকে বলে তেমন নিশ্চয়ই আমার চাচীরাও আমার চাচাত বোনদের গল্প করে বলে। তারাও হয়ত অন্যদের বলে। আমার দাদী মারা গেছেন সেই কবে! ফেরেশতারা উনার ভালো কাজের তালিকায় এসব কথা লিখে নিচ্ছে। দাদী ল্যাপটপ কী জানতেন না। আমি সেই ল্যাপটপে বসে স্ট্যাটাস দিচ্ছি, মানুষ পড়বে, উনার সম্পর্কে ভালো ধারণা করবে। ফেরেশতারা আবারও উনার ভালো কাজের তালিকায় লিখে নিবে।

আমার দাদী গ্রামের মানুষ ছিলেন, কতখানি পড়াশোনা জানতেন আমি তাও জানি না। জানার প্রয়োজনও নাই। আমার আম্মু বলে, “তোমার দাদী অনেক ভদ্র ছিলেন।” এটাই একজন মানুষের হাইয়েস্ট কোয়ালিফিকেশন!

মা বা শাশুড়ি একটা পরিবারের এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ যার কাজ পরবর্তী অন্তত দুই প্রজন্ম মনে রাখে। তাই ভালো শাশুড়ি হওয়াও সওয়াবের। আর বুদ্ধিমতীরা সওয়াব অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া করে না!

Written by : Rabeya Umme Mariam

0 comments
Labels: , ,

বউ পেটাবি? ইসলামি শরিয়ত মতেই পেটা।

ডমেস্টিক ভায়োলেন্স নিয়ে লেখালেখি করার অনুরোধ অনেকে করেন। আগেও লিখেছি বহুবার, আজকে আবারও লিখলাম। দেখা যাক কারও কোন পরিবর্তন ঘটে কিনা।

প্রথমেই একটা হাদিস বর্ণনা করি। সহিহ হাদিস। অনেকেই হাদিসটি শুনেছেন - এবং অবশ্যই হাদিসটি নিয়ে ইস্যু বানিয়েছেন। 

"যদি আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে সিজদাহ দেয়ার অনুমতি থাকতো তবে আমি নারীদের নির্দেশ দিতাম তাঁরা যেন তাঁদের স্বামীদের সিজদাহ দেয়।"

ও মাই গড! আল্লাহর নবী কী বলে ফেললেন! এ যে সুস্পষ্ট পুরুষবাদী মন্তব্য! আগেই বলেছিলাম, ইসলাম নারিপুরুষে বৈষম্য সৃষ্টি করে। মেয়েদের দমিয়ে রাখে। ব্লা ব্লা ব্লা।

হ্যাং অন মাই মাদার্স এন্ড সিস্টার্স ইন ইসলাম। চিন্তা ভাবনা না করে মন্তব্য করা তাসলিমা নাসরিনের কাজ। আপনাকে বুঝতে হবে কথাটার গভীরতা কী।

ইসলামে কেন আল্লাহকে সিজদাহ করতে বলে জানেন? কারন তিনি আমাদের “রব।” 
"রব" শব্দের অর্থ হচ্ছে যিনি একই সাথে আমার সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, লালনকর্তা, রক্ষাকর্তা ইত্যাদি, মোটকথা আমার পুরো অস্তিত্বের মালিক। মানে হচ্ছে তিনি হচ্ছেন আমার "আলটিমেট অথরিটি।" 
যাঁর প্রতি জেনুইন শ্রদ্ধায়, কৃতজ্ঞতায়, ভালবাসায় আমি আমার মাথা মাটিতে নত করি। 
তাহলে বুঝতে পারছেন প্রতিটা স্বামীকে তাঁর স্ত্রীর প্রতি কোন লেভেলের দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে তাঁর স্ত্রী (নবীর অনুমতি থাকলে) "জেনুইন" শ্রদ্ধায়-ভালবাসায়-কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করে দিত? 
কাজটা ভয়ংকর কঠিনরে ময়না। বৌয়ের "জেনুইন শ্রদ্ধা" পাওয়ার তুলনায় এভারেস্ট জয় করা নিতান্তই ডাল ভাত।

কাজেই যেসমস্ত মহিলারা হাদিসটা শুনে কপালটা কুঁচকে গালাগালি শুরু করে দিয়েছিলেন, তাঁরা এখন দয়া করে কপালটা ইস্ত্রী করে ফেলুন।

এবং যে সমস্ত পুরুষেগণ হাদিসটার ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে এতদিন ফায়দা লুটে এসেছেন - তাঁরা তওবা করে আবারও কলিমা পরে মুসলমান হন। হাদিস বিকৃতি করাটাও ভয়াবহ শির্ক। 
কথা যখন উঠলোই, তখন আরেকটা হাদিস বলে নেই।

আমাদের দেশে একদল পারভার্ট বউ পিটিয়ে বিমলানন্দ লাভ করে। তাদের যখন বলা হয়, "ওহে জানোয়ার, তুই বউ পেটাস কেন?"
উত্তরে নপুংশকটা জবাব দেয় - "আল্লাহ কুরআনে অনুমতি দিয়েছে - তোমার কী?"

বদমাইশটাকে যখন আরেকটা হাদিস (সহিহ)"হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর দাসীদের গায়ে হাত তুলো না" শুনিয়ে বলা হয় "নবীজি (সঃ) জীবনেও তাঁর স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলেননি, তাহলে কী তিনি আল্লাহর নির্দেশ মানেন না?" 

তারপরেও ফকিরনিরা একই কথাই আওড়ায়, কুরআন শরীফের সুরাহ নিসায় আল্লাহ পাক বলেছেন, "বৌদের গায়ে হাত তোলা জায়েজ।"
বৌকে যদি ভালবাসতে না পারেন, তাহলে বিয়ে করবেন না। আর যদি কাউকে মারধর করতেই হয়, তবে বক্সিং ক্লাবে ভর্তি হন। মেয়ে মানুষ কোন বালির বস্তা না যে সেখানে আপনি বক্সিং প্র্যাকটিস করবেন।
কথা বাড়াবার আগে নবীজির (সঃ) হাদিসটা ব্যাখ্যা করি। বুঝবেন কেন এই ভদ্রলোক বিশ্বের সর্বকালের সর্বসেরা মানব। যাঁর প্রতিটা কথার গভীরতা অতল।

তিনি কিন্তু বলতে পারতেন, "তোমরা মেয়েদের/নারীদের গায়ে হাত তুলো না।" তিনি কেন বললেন "আল্লাহর দাসী?"
ব্যাখ্যাটা সহজ।
ধরুন আপনি একটি পার্কে গেলেন। পার্কের একটি বেঞ্চ খুঁজে বের করে হুদাই লাথি দিয়ে বেঞ্চটাকে ভেঙ্গে ফেললেন।
বেঞ্চটা যেহেতু সরকারী সম্পত্তি, শেখ হাসিনা নিশ্চই আপনার সাথে বেঞ্চ ভাঙ্গা নিয়ে ঝগড়া করতে আসবেন না।
কিন্তু আপনি যদি আমার ড্রয়িংরুমে এসে হুদাই আমার সোফা ভাঙ্গেন, তাহলে আমিও নিশ্চিত করবো যে আপনি আমার সদর দরজা দিয়ে হুইল চেয়ারে বসে বের হবেন।

"আল্লাহর দাসী" সম্বোধনের মধ্য দিয়ে নবীজি (সঃ) মানুষদের সাবধান করে দিয়েছেন যে এদের ঘাটাঘাটি করলে আল্লাহ নিজে ইনভল্ভড হবেন। এখন আল্লাহর বিরুদ্ধে যাবার সাহস তোমার আছে?
নিজের চোখে দেখা একটা কেস বলি। আপনিও আশেপাশে তাকান, এমন হাজারো কেস দেখতে পাবেন। 
এক মহিলাকে তার বর শুধুশুধু পেটাতো। কারন he is the man! Cowboy! 

একটা সময়ে ব্যাটা স্ট্রোক হয়ে বিছানায় পরে গেল। পনেরো বছর হয়ে গেছে - এখনও সে বিছানায় পরে পরে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করছে। তার দেখাশোনা করছে কে? সেই মার খাওয়া বউটা। আল্লাহর দাসী!

বউ পিটিয়ে কেউ জীবনে উন্নতি করতে পারেনা, সুখী হবারতো প্রশ্নই উঠেনা। চ্যালেঞ্জ দিলাম, পারলে ভুল প্রমান করে দেখান।

এখন আসি, কোরআনের সেই সর্বদা বিকৃতি ঘটানো আয়াতটিতে। যে আয়াতটি ভাঙিয়ে তসলিমা নাসরিন, আসিফ মহিউদ্দিনরা এখনও তাদের পেট পালে। তাদের কথা বিশ্বাস করে একদল লোক বেহুদা ফাল পাড়ে। আবার তাদের ফালাফালির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আরেকদল দল জলকে আরও বেশি ঘোলা করে।

কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে জন্মে, বাংলাদেশে বড় হয়ে, বাংলায় কথা বলে কোন সাধারন ছেলেকে যদি আমি মেঘনাদ বধ মহাকাব্য ধরিয়ে বলি "পড়ে শোনা," ছেলেটা মহাকাব্যের শক্তিশালী শব্দ ঝংকারে মুগ্ধ হতে হতে একেবারে কুপোকাত হয়ে বলতে বাধ্য হবে, "কী ভাষায় লিখছে ভাই? এইটা কী বাংলা?"
সেখানে ক্লাসিক্যাল আরবির (বর্তমান আরবদেরও পক্ষে সেই ভাষা কঠিন) অতি দূর্বল তর্জমা পড়ে কেউ যদি কুরআন শরীফের সমালোচনা করতে বসে - তাহাকে আহাম্মক না বলিয়া আর কী নামে ডাকা যায় তাহা আমার বোধগম্য নয়।

কথা না বাড়িয়ে পুরো আয়াতটা পড়া যাক।
"পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল (Protectors and maintainers of women) এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য (শারীরিক শক্তি) দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় (support them from their means) করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং "প্রহার" কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।"
পুরো আয়াতটি পড়লেই কিন্তু কোন কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়না। এত সুন্দরভাবে ব্যাখা করা হয়েছে যে না বুঝার কোন উপায়ই নেই।

তারপরেও পোলাপান যেহেতু বুঝতে পারেনা, কাজেই আরও সহজভাবে ব্যাখ্যা করছি।
প্রথম অংশে বুঝাই যাচ্ছে, আল্লাহ পুরুষদের দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর স্ত্রীদের জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে।

এখন মেয়েরা যারা ঘরে থাকে, তাঁদেরকে আল্লাহ বলেছেন, "তাঁরাই ভাল, যারা লোকচক্ষুর আড়ালেও নিজেদের হেফাজত করেন।"
ঐশ্বরিয়ার স্বামী বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে তাঁর বাড়িতে কী ঘটে সেই খবর মানুষের জানার কথা না। এখন ঐশ্বরিয়া তখনই একজন আদর্শ নারী হবে যখন সে তাঁর স্বামীর অবর্তমানে আমাকে চুপি চুপি তাঁর ঘরে ডাকবে না।
এই পর্যন্ত ঠিক আছে? আশা করি সবাই একমত। 

যদি কেউ বলতে চান যে "প্রাপ্তবয়স্ক নারীপুরুষ পরষ্পরের সম্মতিতে ইয়ে করতেই পারে।" - তাঁদের বলছি, নিজেদের ঐশ্বরিয়ার স্বামীর অবস্থানে ফেলে কল্পনা করুন। ব্যপারটা যে অনৈতিক সেটা বুঝতে পারছেন?
না বুঝলে এইটা ভাবুন, ঠিক যে কারনে আপনি নিজের মাকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বাড়িতে একলা ছেড়ে আসবেন না। হু.ম.এরশাদ প্রাপ্তবয়ষ্ক, আপনার মাও প্রাপ্তবয়ষ্কা - কিন্তু তারপরেও কিছু সম্পর্কের বর্ডারে কাঁটা তারের বেড়া থাকতে হয়।

যাই হোক, ঐশ্বরিয়ার স্বামী দেখলো আমার সাথে রাতের পর রাত জেগে তাঁর স্ত্রী গল্প করে - টেক্সট ম্যাসেজ পাঠায় - শপিংয়ে ঘুরতে বেরোয়, এবং সবচেয়ে ভয়াবহ এবং বিরক্তিকর যা তা হলো সে প্রায়ই বাড়িতে এসে দেখে আমি বেরিয়ে যাচ্ছি।
আপনি হলে কী করতেন?
আমি বলি, এভারেজ অ্যামেরিকান দম্পতিদের ডমেস্টিক ভায়োলেশনের প্রধান কারনই গার্ল ফ্রেন্ড/ওয়াইফদের "চিটিং।" 
একজন সুস্থ মাথার পুরুষ জীবনেও, কোন অবস্থাতেই মেনে নিতে পারবে না তাঁর জীবন সঙ্গিনী তাঁকে ফেলে আরেকজনের সাথে কেলিয়ে বেড়াচ্ছে।
এইসব কোন্দল অনায়াসে খুন খারাবি পর্যন্ত গড়ায়। 

জ্বী, আমি অ্যামেরিকান পুরুষদের কথা বলছি। পৃথিবীর সবচেয়ে মডার্ন, শিক্ষিত, সেকুলার, মুক্তমনা পুরুষদের জাত।
সেখানে কুরআন কী নির্দেশ দিয়েছে? প্রথমে "সদুপদেশ দাও।"
মানে যখন আপনি দেখবেন আপনার স্ত্রী আমার সাথে একটু বেশি বেশিই করছে, তখন প্রথমেই ঝগড়া টগরা না করে আপনি অতি মধুর কন্ঠে, ভদ্রতার সাথে বলবেন, "ডার্লিং, তুমি প্লিজ ঐ মঞ্জুর ছেলেটার সাথে এইভাবে মেলামেশা করো না। এই কাজটা ভাল না।"

কথা হচ্ছে, আপনি যখন আপনার স্ত্রীকে আমার সাথে এইভাবে ঘনিষ্ট মেলামেশা করতে দেখবেন, তখন কী বাস্তবে এমন ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে পারবেন? কিন্তু কুরআন ঠিক এই নির্দেশটাই দিয়েছে। কাকে অধিকার বেশি দিল তাহলে?
তারপরেও যখন দেখবেন বউ আমার সাথে মেলামেশা বন্ধ করছেন না, তখন বলা হয়েছে - "শয্যা ত্যাগ কর।"

মানে বালিশ নিয়ে আলাদা শোয়া শুরু করুন। দেখুন মাঝরাতে অ্যাশ আপনাকে মানাতে আসেন কিনা।
যদি দেখেন আপনার সাথে শোয়া না শোয়ায় তাঁর কিছুই যায় আসে না, অন্য অর্থে অন্যের সাথে সে শোয়ায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে - ঠিক তখনই আপনাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাঁকে "প্রহার" করতে। তবে এখানেও একটু ইন্টারেস্টিং ব্যপার লক্ষ্যনীয়। বাক্যটিতে যে verb (দারাবা) ব্যবহার করা হয়েছে - সেই একই verb তায়াম্মুমের (পানির সংকট থাকলে মাটি ঘসে পবিত্র হওয়ার যে সিস্টেম আমাদের ধর্মে চালু আছে) নির্দেশনামায় ব্যবহার করা হয়েছে। 

"ওয়াদরিবুহুন্না।" যার আক্ষরিক অনুবাদ করলে হবে 'তাদের প্রহার কর' বা 'strike them.' এর কোনটাই কিন্তু বাক্যটিতে ঠিকমতন ফিট করেনা। কারণ এটা যদি ফিট করে তাহলে বলতে হবে তায়াম্মুমের সময়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাটিকে পেটাতে। তার মানে ওদের প্রহার করলেও এমনভাবে করতে হবে যেভাবে আপনি তায়াম্মুম করেন। মানে হাল্কা হাত ঘষাঘষি। স্কলাররা বলেন মেসওয়াক (নিম ডালের টুথব্রাশ) দিয়ে আঘাত। তাও এমনভাবে যে শরীরে দাগ বসতে পারবেনা - মুখেতো মারতেই পারবেন না।আরও অনেক নিয়ম কানুন আছে। 

এবং সবার আগে মাথায় রাখতে হবে হাদিসটির কথা - "আল্লাহর দাসীদের গায়ে হাত তুলো না।"
চিন্তা করে দেখেন, কোন লেভেলের এক্সট্রিম অপরাধ করলে মেয়েদের গায়ে মেসওয়াক দিয়ে আঘাতের কথা বলা হয়েছে, আর আমাদের দেশ বিদেশের মূর্খ্য পুরুষ মানুষ ডালে সামান্য লবণ কম বেশি হলে মেয়েদের গায়ে হাত তোলে!

এখন মেয়েরা, আপনারা বুঝতে পারছেন যে কুরআন আসলে আপনাদের প্রাণ রক্ষা করেছে? কারন যেকোন পুরুষ যদি দেখে তাঁর প্রেয়সী অন্যের সাথে ইটিশপিটিশ করছে - প্রথম চিন্তাটা যা তাঁর মাথায় আসবে তা হচ্ছে আপনাকে খুন করে ফেলতে হবে। সেখানে আল্লাহ বলেছেন খুব বেশি হলে মেসওয়াক দিয়ে আঘাত করতে!

তাও আবার আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেছেন যদি কেউ ভুল বুঝতে পারে, এবং অনুতপ্ত হয় তাহলে তাঁকে ক্ষমা করে দিতে।
বাবারে! এত বড় কলিজা কোন পুরুষের আছে? কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ বলে কথা!

এবং পুরুষেরা, যারা পুরো আয়াত না পড়ে শুধুমাত্র একটা শব্দ ধরে নিয়ে বউদের গায়ে হাত তুলে এসেছেন, তাঁরা এখন কানে ধরে সেই বউদের সামনে উঠবস করে ক্ষমা চান। কারন তাঁরা ক্ষমা না করলে তাঁদের মালিক ব্যপারটাকে পার্সোনালি নিবেন - এবং তাহলেই আপনার খবর আছে। You have news. কারন আল্লাহ আয়াতটা শেষ করেছেন কিভাবে দেখেছেন? "নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।" তুমি যতই বৌয়ের উপর কর্তৃত্ব ফলাও না কেন, তোমার উপরে একজন আছেন যিনি কারও পরোয়া করেন না।

0 comments
Labels: , , ,

কাব বিন আশরাফসহ যাদের অশ্লিল কবিতা লেখার অপরাধে মৃত্যুদন্ড হয়েছিল


কোপাকুপি নিয়ে কিছু প্রমানসহ একটা লেখা লিখলাম। প্রতিটা প্রমান দিলাম কার জীবনী থেকে? হযরত মুহাম্মদ (সঃ), দি আল্টিমেট মুসলিম/ইসলামিক স্কলার অন আর্থ। দিনের আলোর মতই বুঝিয়ে দিলাম ইসলামের নামে আর যাই হোক কোপাকুপি নিষিদ্ধ। কিন্তু অনেকেই আমার কথা মানতে নারাজ।
কেউ কেউ বলছেন, ওদের অশ্লীলতা এত প্রকট যে মেজাজ ঠিক রাখাটাই দায়।


সহিহ বাত। অবশ্যই মেজাজ খারাপ হবে। আমার মা বাপকে নিয়ে কেউ ফালতু কথা বললে ঘুষায়ে দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করে। আমার দেশকে নিয়ে কেউ উল্টাপাল্টা কথা বললে আমি মুখ দিয়ে মেশিন গান ছোটাই। ক্রিকেটারদের অপমান করাটাই যা আমরা মেনে নিতে পারিনা সেখানে আল্লাহ এবং নবীর (সঃ) স্থানতো আরও অনেক অনেক উপরে। অবশ্যই রাগ করা উচিৎ। আমরাতো রোবট না - আমাদের ইমোশন আছে। তবে সেই আল্লাহ এবং নবীই (সঃ) শিক্ষা দিয়েছেন রাগকে কন্ট্রোল করতে। ঠিক যেমনটা সুন্দরী মেয়ে দেখে আমার মনে প্রেম জাগে, কিন্তু তার মানে এই না যে আমি গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে ফেলবো। নিজের মনকে কন্ট্রোল করাটাই ইসলাম। নাহলেতো আমার আর জংলি জানোয়ারের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকেনা। 


অনেকেই আমাকে কিছু নাম দিয়ে বলছেন "এর সাথে তাহলে এমনটা হয়েছে কেন?"
তাঁদের আলাদা আলাদা করে বারবার একই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আজকের দিনটাই শেষ হয়ে গেল। এরচেয়ে ভাল একটা আস্ত পোস্ট দিয়ে দেই। কারও উত্তরের প্রয়োজন হলে সরাসরি আস্ত পোস্ট কপি পেস্ট করে দিবেন। যদি তাঁদের সামর্থ্য থাকে, তাহলে আমার উল্লেখ করা ঘটনাগুলো মিথ্যা প্রমান করে দেখাক। ঘটনাগুলো ডক্টর ইয়াসির ক্বাদী এবং ওস্তাদ নোমান আলী খানের মুখ থেকে শোনা। এই মুহূর্তে বিশ্বখ্যাত দুই ইসলামিক স্কলার।
তাহলে শুরু করি? 


বিসমিল্লাহ। 

এক নম্বর নাম: কাব বিন আশরাফ। লোকটাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। বিজ্ঞ জনের অভিমত এই কবি (তখনকার যুগের ব্লগার) ইসলাম, নবীজি (সঃ) ও মুসলিমদের বিশেষ করে মুসলিম নারীদের জড়িয়ে অশ্লীল থেকে অশ্লীলতম কবিতা (ব্লগ) রচনা করতো। একারনেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এই কাব বিন আশরাফ নিয়ে কথা তোলার আগে আমাকে বলুন সে কে ছিল? মানে তার গোত্র কী? বনু নাদির। জ্বী, এই সেই খন্দকের যুদ্ধের বিশ্বাস ঘাতক (আধুনিক টার্ম হবে "রাজাকার," মদিনাবাসী হয়েও মদিনা সনদ ভঙ্গ করে হানাদার কুরাইশদের সাহায্য করেছে যুদ্ধে - যদি সফল হতো মুসলিমরা এক ঝটকাতেই সব নিঃশেষ হয়ে যেত) বনু নাদির গোত্র। কাবকে শুধু একাই নয়, ওদের আস্ত গোত্রের যুদ্ধ করতে সমর্থ্য সব পুরুষদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। আমাদের রাজাকার, আল বদর, আল শামসকেও সময় মতন এইভাবেই ঝুলিয়ে দিলে আজকে দেশটা অনেক সুন্দর হতো। নবীজির (সঃ) জীবনী থেকে আমরা কোন শিক্ষাই নিতে পারিনা, আফসোস।


যাই হোক, তা এই কাব বিন আশরাফ অশ্লীল, উস্কানিমূলক কবিতা লিখতো ঠিকই, কিন্তু স্রেফ কবিতা ছাড়াও এই একই লোক নবীজির (সঃ) খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। বদর যুদ্ধের পর আবু সুফিয়ানের (রাঃ) বাড়িতে গিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল তাঁকে হত্যার ব্যপারে। এখন আপনিই বলেন, যেকোন রাষ্ট্রে, যদি কেউ তার প্রধাণমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে, attempt নিতে গিয়ে ধরা পড়ে - তবে তার শাস্তি কী হওয়া উচিৎ?


ঐতিহাসিক উদাহরণ আমাদের দেশেই আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা চলছে জেনেও চুপ করে ছিলেন, হত্যাকারীরা এর আগেও অভ্যুন্থান ঘটাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল এবং তিনি তাদের মাফও করে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন "বাংলার মানুষ আমাকে মারবে না।"
- ফলাফল "অগাস্ট ট্রাজেডি।" 


রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু রুলস আছে। কখনও কখনও শাসককে কঠোর হতেই হয়, নাহলে কিছুই লাইনে থাকেনা।
এখন আসি আরেকটা নামে। 


এই লোকটার নাম অনেকেই জানেনা, কিন্তু ঘটনা ঠিকই জানেন। চলুন আগে ঘটনা জেনে নেই।
মক্কা বিজয়ের দিন ছয় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামির (দুইজন বাদে যাদের সবাইকেই ক্ষমা করে দেয়া হয়) একজন কাবার গিলাফ জড়িয়ে ধরে মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চাইছিল। সাহাবীরা এই নাটকীয় ঘটনায় দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। তাঁরা নবীজির (সঃ) কাছে যান, ঘটনা খুলে বলেন, এবং নবীজি (সঃ) তারপরেও মৃত্যুদন্ড ক্ষমা করেন না। 


লোকটা কী করেছিল? সে অশ্লীল কবিতা লিখতো (ব্লগিং) এবং সে দুইজন দাসী নিয়োগ করেছিল যারা ইসলাম, নবীজি (সঃ) ও তাঁদের সাহাবীদের নিয়ে অশ্লীল কবিতা লিখতো।
ব্যস, এই পর্যন্তই সবাই পড়েন। আর বেশি পড়তে চান না। আরেকটু পেছনে যাবার ধৈর্য্য কই?


যাই হোক, যাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার নাম আবদাল্লাহ ইবন খাতাল (কোথাও কোথাও বলা হয়েছে আবদাল্লাহ ইবনে আখতাল, যেই নামেই ডাকা হোক সে একই ব্যক্তি)। কবিতা রচনার আগে এই লোকটা প্রথমে মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে হিজরত করে মুসলিম হয়েছিল। নবীজি (সঃ) তাকে এবং আরেকজন সাহাবীকে একটি সফরে পাঠান। এই বিশ্বাসঘাতক সেই সাহাবীকে হত্যা করে তাঁর মালপত্র লুট করে মক্কা পালিয়ে এসে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালায়। তারপর দুইটা দাসী কিনে ওদের দিয়ে মুসলিমদের ব্যঙ্গ করে কবিতা লেখায়। মাথায় রাখুন, সেই লোকটা কবিতা লিখার চেয়েও বড় অপরাধ করেছিল, সাহাবী হত্যা। একটা মানুষ হত্যা সহজ অপরাধ না।


 কুরআন বলে, "যে একজন নিরপরাধ মানুষ হত্যা করলো, সে যেন সমস্ত মানব জাতিকে হত্যা করলো।"
এবং লিস্টের তৃতীয় নাম তার দুই দাসীর (ফারতানা এবং সারা), যাদেরকেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তবে কেবল একজনের বিরুদ্ধে সেটা কার্যকর করা হয় (ফারতানা)। দ্বিতীয়জনকে (সারা) ছেড়ে দেয়া হলো কেন? কেন? সে শুধু বলল "Sorry."
তারমানে প্রথমজনও যদি দুঃখিত হতো তাকেও মাফ করা হতো।


তারমানে আবদাল্লাহকেও মাফ করা হতো যদি না সে মানব হত্যার মতন জঘন্য পাপে পাপী হতো।
লজিক মিলছে? বাকি সত্য আল্লাহ জানেন। ভুল হলে তিনি মাফ করুন। আর সত্য হলে তিনি সবাইকে জ্ঞানী করুন। জোরে বলেন আমীন!


শেষ করি, কা'ব বিন আশরাফ থেকে শুরু করে দাসী ফারতানা পর্যন্ত উদাহরণগুলো যারা বারবার ব্যবহার করছেন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে হযরত আয়েশার (রাঃ) একটি সহিহ হাদিস বয়ান করে, নবীজির (সঃ) জীবন সঙ্গিনী এবং সবচেয়ে বেশি হাদিস বয়ানকারী মা আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, "নবীজি (সঃ) জীবনেও নিজের ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে কাউকে শাস্তি দেননি।"
শুনেছেন? আবার শোনেন, তিনি, কখনও, নিজের ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে, কাউকে, শাস্তি দেননি। জীবনেও না।
এমনি এমনি কাউকে রাহমাতাল্লিল আলামিন ডাকা হয়না। 


এখন কথাটা মাথায় ভাল মতন ঢুকিয়ে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঘুমান। কোন অশ্লীল ব্লগারের মাথা কাঁটার আগে ভাল করে নবীজির(সঃ) জীবনী, সাহাবীদের জীবনী, এবং অবশ্যই অবশ্যই আল কুরআনের বাণীগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ুন। 


তারপরে আপনার যদি কাউকে (যেকোন আল্লাহর বান্দা, হিন্দু হোক, মুসলিম হোক কিংবা নাস্তিক) গালি দিয়ে মনে মনে অনুতাপ না হয়, ভয় না হয় যে "আমি গালিটা না দিয়ে আরেকটু ভালভাবে বুঝালেও পারতাম, গালির জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে" তাহলেও বুঝবেন আপনার ঈমান পোক্ত হয়নি।
খাঁটি মুসলিম গলা চড়িয়েও কথা বলেনা। এটাই ইসলামের শিক্ষা।


(সবচেয়ে বড় কন্ডিশনটাই মূল পোস্টে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, যে কারনে অনেক কনফিউশন তৈরী হচ্ছে। "ফারতানাকে কী তাহলে 'অশ্লীল কবিতা' লেখার অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো? তাহলেতো ঠিকই আছে।"


ব্যপারটা মাথায় রাখতে হবে, তখনকার "কবিতা" মানে আজকের যুগের ফুল লতা পাতা ভালবাসা নিয়ে লেখা কবিতা না। তখনকার প্রোপাগান্ডাই হতো কবিতার মাধ্যমে। এবং ইসলামের বিরুদ্ধে কবিতা মানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কবিতা। তার মানে "ইসলামের বিরুদ্ধে অশ্লীল কবিতা" লেখার শাস্তি দেয়ার আগে প্রধান কন্ডিশন হচ্ছে রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র হতে হবে। কেবল রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হলেই হবেনা, আইনও শরিয়া আইন হবে। 


কাবকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবার পর। মক্কা বিজয়ের পরেই বাকিদেরও শাস্তি দেয়া হয়েছিল। আগে কিন্তু নয়। যেকোন আধুনিক রাষ্ট্রেও স্পাইদের ডেথ পেনাল্টি দেয়া হয়। মাসুদ রানা যারা জীবনে একবারও পড়েছেন, তাঁরা নিশ্চই বুঝেন। 


এখানেই কথা থেকে যায় - বাংলাদেশতো ইসলামী রাষ্ট্র না। শেখ হাসিনাতো খলিফা না। আমরা শরিয়া আইনে সংবিধান গঠন করিনাই।
কাজেই এই কোপাকুপিগুলো "খুন।" এদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নিতে হবে। )




Written by: মঞ্জুর চৌধুরী 

1 comments
Labels: ,

পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রা কতটা মঙ্গল বয়ে আনে?


(ক) লাল সাদার সাথে বাঙালীর কী সম্পর্ক? এটা তো শাখা সিঁদুরের কালার!
তাহলে কি কৌশলে আমাকে শাখাসিঁদুরে অভ্যস্ত করা হচ্ছে?

(খ) রমনা বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীরা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে প্রস্তুত, প্রস্তুত শ্রোতারা, অপেক্ষা কেবল সূর্য উঠার, সূর্য উঠার অপেক্ষায় মুসলমান থাকতে পারে? ,
 এটা তো সূর্য পুজারীদের কাজ! মুসলমান সূর্য উঠলে ইবাদত বন্ধ করে দেয়। কারণ নবীজী সা. সূর্য উঠা আর ডুবার সময় নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন, যেনো আমাদের ইবাদত সূর্যপূজারীদের সাথে মিলে না যায়, আর সেই মুসলমান প্রত্যুষে ফজরের সালাহ বাদ দিয়ে সূর্য উঠার অপেক্ষায় থাকবে?!!

(গ) সূর্য উঠার সাথে সাথেই লম্পট রবি ঠাকুরের প্রার্থণামূলক সঙ্গীত "এসো হে বৈশাখ এসো......" দিয়ে শুরু হবে বর্ষবরণ। ঠাকুরের প্রার্থনা কি এক আল্লাহর কাছে?!!

ওহে মুসলমান তুমিও সে মুশরিকের ভাষায় প্রার্থনা করবে?
এই গানটির মধ্যে শিরক স্পষ্ট। কারণ তার একটি কলি হলো "অগ্নিস্মানে সুচি হোক ধরা"
অর্থাৎ আগুনে গোসল দিয়ে গোটা জগত পবিত্র হোক। আগুন পবিত্র করার ক্ষমতা রাখে এ বিশ্বাস হিন্দুদের, আর তাই মৃত্যুর পর আগুনে পুড়িয়ে পবিত্র করে;
ওহে মুসলমান তুমিও কি সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী?!!
আসতাগফিরুল্লাহ।

(ঘ) সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শিরক হয় মঙল শোভাযাত্রায়।
এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে সকল অমঙ্গল দূর করবে। মঙ্গল অমঙ্গলের মালিক কে? এখানে প্রার্থনাটা কার কাছে?
সেটা বুঝতে হিন্দুদের একটা বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে হবে।
হিন্দুদের এক দেবতার নাম বিষ্ণু দেবতা, যার পত্নী হচ্ছে লক্ষ্মীদেবী। যার পাঁচ কন্যা; পদ্মা, পদ্মালয়া, ইন্দিরা, শোভা, কমলা। তাদের বিশ্বাস সমস্ত মঙ্গলের মালিক হচ্ছে লক্ষ্মী দেবী, যার বাহন হলো পেচা।
চারুকলার সোনার ছেলেরা বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তির সাথে পেচার মূর্তিটিও ঢুকিয়ে দেয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়।
এবার ভাবুন, পেচা কি বাংলায় কথা বলে? না পান্তা ইলিশ খায়? পেচার সাথে বাঙালীর কী সম্পর্ক?
আসলে সম্পর্ক বাঙ্গালীর সাথে নয়, লক্ষ্মীদেবীর বাহন রেডি করে আহবান করা হচ্ছে তাকে। কারণ সে না আসলে মঙল বিতরণ করবে কে?
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ ...............!!

আসলে শয়তান যদি আমাদের পূজামণ্ডপে ডাকতো আমরা তো যেতাম না, তাই সে কৌশল পরিবর্তন করে আমাকে দিয়ে শিরক ঠিকই করাচ্ছে, কিন্তু নাম দিচ্ছে বাঙালী চেতনা!!
লিখেছেনঃ শায়খ হাসান জামিল

0 comments
Labels: ,

মেয়েদের আত্বরক্ষার কৈশল ও আইনি অধিকার

লিখেছেন : মাসরুফ হোসেন সিনিয়র এ এস পি বাংলাদেশ পুলিশ

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,
বাংলার বাঘিনীদের প্রতি লড়াই করার পদ্ধতি জানিয়ে লেখা পোস্টগুলোর লিংক সবগুলো একসাথে নিচে দিচ্ছি। সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট-করা বদমায়েশগুলোকে কিভাবে ঘরে বসে এক দুদিন মাত্র দশ মিনিট অনুশীলন করেই পিটিয়ে লাশ বানাবেন এ নিয়ে ছয়টা পোস্ট। আপনার আত্মরক্ষার আইনি অধিকার নিয়ে একটি পোস্ট, সবশেষে অনুপ্রেরণা হিসেবে "খারাপ মেয়ে"কবিতাটি।সাথে বোনাস: মেয়েদের সেল্ফ ডিফেন্স কেন দরকার এ নিয়ে ছোট একটা লেখা।

লেখাগুলো বিনা দ্বিধায় শেয়ার করুন। কপিপেস্ট করুন, নিজের নাম চালিয়ে দিন, লিফলেট বানিয়ে বিতরণ করুন, যেভাবে ইচ্ছে কাজে লাগান। অনেকেই আছেন আমাকে অপছন্দ করেন, এরকম হলে আমার নামও দেবার দরকার নেই-লেখক কে সেটা জরুরি নয় মোটেই
বাংলার বুকে হাজার হাজার বাঘিনী গর্জ্বে উঠুক!
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
ষষ্ঠ পর্ব
আত্মরক্ষার আইন:
অনুপ্রেরণা:
কেন সেল্ফ ডিফেন্স

মেয়েদের আত্মরক্ষা সংক্রান্ত সবগুলো লেখা পিডিএফ আকারে এখানে পাবেন। আগ্রহীরা ডাউনলোড করে সরাসরি প্রিন্ট আউট দিতে পারবেন।

এখানে ঘরে বসে দশ পনের মিনিট অনুশীলন করে কিভাবে একটা মেয়ে ফাইট ব্যাক করবে এর সচিত্র বর্ণনা রয়েছে। সাথে আছে আত্মরক্ষা সংক্রান্ত আইন এবং অনুপ্রেরণামূলক কিছু লেখা।

কোন কপিরাইট রাখছিনা, যার যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করুন। তবে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা নিষেধ- It has to be absolutely free smile emoticon
জাগো গো বাঘিনী!
Click Here


লিখেছেন : মাসরুফ হোসেন সিনিয়র এ এস পি বাংলাদেশ পুলিশ Mashroof Hossain, is a Senior Assistant Superintendent of Police (Sr. ASP) of Bangladesh Police Force.  Fondly known as “Supercop”, he has been credited for implementing revolutionary IT-based law & order services such as the “Dhaka Metropolitan Police App” and the “Digital Safe Zone Concept”


0 comments
Labels: , ,

জঙ্গিবাদ সম্পর্কে ইসলাম তথা পবিত্র আলকুরআন ও আল হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি

সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের কতিপয় দেশে জঙ্গিবাদ একটি বার্নিং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ইসলাম কখনো বোমাবাজি, হত্যা, গুপ্তহত্যা, আত্মঘাতী হামলাসহ কোন ধরনের অরাজকতা সমর্থন করে না। এই পথে যারা পা বাড়িয়েছে তারা জঘন্যতম অপরাধে জড়িত হয়েছে এবং ফিতনা-ফাসাদে লিপ্ত হয়েছে।
বক্ষমান প্রবন্ধে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে ইসলাম তথা পবিত্র আলকুরআন ও আল হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। 

জঙ্গিবাদের সংজ্ঞা
জঙ্গি, জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদী শব্দগুলোর মূল হল জঙ্গ। এটি (جنگ ـ ج ن گ) ফার্সী ও উর্দু ভাষার শব্দ। পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত ও প্রসিদ্ধ একটি পত্রিকার নাম দৈনিক জঙ্গ। জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ, তুমুল কলহ, লড়াই, প্রচন্ড ঝগড়া। জঙ্গি অর্থ যোদ্ধা। সেভাবে জঙ্গিবাদ অর্থ জঙ্গিদের মতবাদ, দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকান্ড। ইংরেজীতে বলা হয় Militant, Militancy কিংবা Military activities. Oxford Advanced Learner’s Dictionary-তে বলা হয়েছে : Militant adj, Favouring the use of force or strong pressure to achieve one’s aim. অর্থাৎ কারো উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য শক্তি প্রয়োগ বা প্রবল চাপ প্রয়োগ। Chamber’s Twentieth Century Dictionary-তে বলা হয়েছে : Militant adj, fighting, engaged in warfare অর্থাৎ সংগ্রামরত বা যুদ্ধরত। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে : using violence, অর্থাৎ সহিংসতা অবলম্বন করা। জঙ্গিবাদ যেহেতু নতুন শব্দ তাই এর আরবী প্রতিশব্দ আরবী অভিধানসমূহে পরিলক্ষিত হয় না। তবে এর কাছাকাছি যে শব্দটির ব্যবহার আমরা দেখতে পাই তা হল (الإرهاب) অর্থাৎ কাউকে ভয় দেখানো, সন্ত্রস্ত করে তোলা, ভীতি প্রদর্শন করা। 

পবিত্র আলকুরআনে বলা হয়েছে : 
وَأَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِن قُوَّةٍ وَمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهِ عَدْوَّ اللّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْ لاَ تَعْلَمُوْنَهُمُ اللّهُ يَعْلَمُهُمْ ـ
‘‘আর তোমরা যতদূর সম্ভব নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য ও পালিত ঘোড়া তাদের সাথে মুকাবিলা করার জন্য প্রস্ত্তত করে রাখ যেন তার সাহায্যে আল্লাহ এবং নিজেদের দুশমনদের আর অন্যান্য এমন সব শত্রুদের ভীত শংকিত করতে পার যাদেরকে তোমরা জান না। কিন্তু আল্লাহ জানেন।’’ 

পারিভাষিক অর্থে ধর্মীয় কারণে রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে চোরা গোপ্তা হামলা, অতর্কিত আক্রমণ, হত্যা করা, আত্মঘাতী হামলা কিংবা কোন নির্দিষ্ট মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে জঙ্গিবাদ বলে।

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ : পূর্বের অনুচ্ছেদে জঙ্গিবাদের সংজ্ঞা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পার্থক্য তুলে ধরা হচ্ছে। সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ ত্রাস শব্দ হতে উদ্ভূত। এর অর্থ হল ভয়, ভীতি, শংকা। সন্ত্রাস হল আতংকগ্রস্ত করা, অতিশয় ত্রাস বা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর সন্ত্রাসবাদ হল, রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের জন্য হত্যা, অত্যাচার ইত্যাদি কার্য অনুষ্ঠান নীতি। এর অর্থ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে : The systematic use of violance to create a general climate of fear in a population and thereby to bring about a particular political objective. 

অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে কোন জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রণালীবদ্ধ সহিংসতার মাধ্যমে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা। আরবী বিশ্বকোষে বলা হয়েছে : 

‘‘অর্থাৎ ভয়ভীতি সঞ্চারের লক্ষ্যে শক্তি প্রয়োগ করা অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে হুমকি প্রদর্শন করা। 
‘বিশ্ব মুসলিম সংস্থার’ অধীন ‘ইসলামী ফিক্হ্ কাউন্সিল’ ১৪২২ হিজরীতে পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ১৬তম অধিবেশনে সন্ত্রাসের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করে তা হচ্ছে,

অর্থাৎ ‘কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা রাষ্ট্র কোন মানুষের ধর্ম, বিবেক বুদ্ধি, ধন-সম্পদ ও সম্মান-মর্যাদার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে যে শত্রুতার চর্চা করে তাকে সন্ত্রাস বলে।’ 
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা যে জিনিসটি উপলব্ধি করেছি তা হল সাধারণত অন্যায়ভাবে যে কোন ভীতি প্রদর্শন, ক্ষতি-সাধন, হুমকি সৃষ্টি ইত্যাদি অপরাধমূলক আচরণকে সন্ত্রাস বলে।
জঙ্গিবাদের উত্থান

ধর্মের নামে যে সন্ত্রাস এটি কিন্তু নতুন বিষয় নয়। প্রাচীন কাল থেকে তা চলে আসছে। ইয়াহুদী উগ্রবাদী ধার্মিকগণ ধর্মীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছেন। মানব ইতিহাসে প্রাচীন যুগের প্রসিদ্ধতম সন্ত্রাসী কর্ম ছিল ইয়াহুদী যীলটদের সন্ত্রাস। খৃস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী ও তার পরবর্তী সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে বসবাসকারী উগ্রবাদী এ সকল ইয়াহুদী নিজেদের ধর্মীয় ও সামাজিক স্বাতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আপোসহীন ছিল। যে সকল ইয়াহুদী রোমান রাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করত বা সহ অবস্থানের চিন্তা করত এরা তাদেরকে গুপ্ত হত্যা করত। প্রয়োজনে এরা আত্মহত্যা করত, কিন্তু প্রতিপক্ষের হাতে ধরা দিত না। 

মধ্যযুগে খৃস্টানদের মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারণে সন্ত্রাসের অগণিত ঘটনা দেখা যায়। বিশেষতঃ ধর্মীয় সংস্কার, পাল্টা সংস্কার এর যুগে ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্টদের মধ্যে অগণিত যুদ্ধ ছাড়াও সন্ত্রাসের অনেক ঘটনা দেখা যায়। ইসলাম ধর্মের প্রথম যুগে জঙ্গিবাদের কিছু ঘটনা উল্লেখ করার মত। ৩৫ হিজরী সালে (৬৫৬ খৃ.) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান উসমান (রা) কতিপয় বিদ্রোহীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। এক পর্যায়ে আলী (রা) খিলাফাতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অধিকাংশ সাহাবী আলী (রা)-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। কিন্তু তৎকালীন সিরিয়ার গবর্ণর মুয়াবিয়া (রা)সহ কিছু সাহাবী আলী (রা)-এর আনুগত্য অস্বীকার করেন। মুয়াবিয়া (রা) দাবি করেন যে, আগে উসমান (রা)-এর হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলী (রা) বলেন যে, রাষ্ট্রিয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পূর্বে হত্যাকারীদের বিচার শুরু করলে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পেতে পারে। 

মুয়াবিয়া (রা) এই মত প্রত্যাখান করার কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়। এটাই ছিফ্ফিন যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু লোক হতাহত হতে থাকে। এক পর্যায়ে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলী (রা) ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মাঝে আপোস-মীমাংসার পর একটি সালিসী কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু আলী (রা)-এর অনুসারীদের একদল লোক তাঁর পক্ষ ত্যাগ করে মানুষের বিচার মানতে অস্বীকার করে। ইতিহাসে এ দল ‘খারেজী’ নামে পরিচিত। তারা আওয়াজ তোলে (إنِِ الْحُكْمُ إلاَّ للهِ) আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইন নেই।

 তারা আরো দাবী করে যে, একমাত্র আল্লাহর আইন ও আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছু চলবে না। তারা বলে, আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন অবাধ্যদের সাথে লড়তে হবে। মহান আল্লাহ বলেন : 
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوْا فَأَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الأخْرَى فَقَاتِلُوْا الَّتِىْ تَبْغِىْ حَتَّى تَفِئَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوْا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَــ
‘‘মু’মিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। অতঃপর তাদের একদল অপর দলের উপর অত্যাচার বা সীমালঙ্ঘন করলে তোমরা অত্যাচারী দলের সাথে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে পছন্দ করেন।

 তারা উল্লেখ করে, আল্লাহ এখানে নির্দেশ দিয়েছেন যে, সীমালঙ্ঘনকারী দলের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারা বলে মুয়াবিয়ার (রা) দল সীমালঙ্ঘনকারী, কাজেই এদের আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে মানুষকে সালিস করার ক্ষমতা প্রদান অবৈধ। অতঃপর তারা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করল। বসরা ও কুফা হতে এসে সারা দেশে গোলযোগ শুরু করল। প্রথমে তারা মাদায়েন শহর অবরোধের চেষ্টা করে। এ চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারা নাহরাওয়ান নামক স্থানে সমবেত হয় আলী (রা)-এর সাথে যুদ্ধ করতে। তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০০। আলী (রা) তাদেরকে বুঝালেন অস্ত্র সংবরণ করতে। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় ১৮০০ খারেজি কিছুতেই আলীর (রা) বিরুদ্ধে অস্ত্র সংবরণ করতে রাজী হলো না। ৬৫৯ খৃস্টাব্দে তারা আলী (রা) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়। যাকে নাহরাওয়ানের যুদ্ধ বলা হয়। কিন্তু তাদেরকে সম্পূর্ণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নাহরাওয়ান যুদ্ধের পর খারেজীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং নিজেদের মতবাদ প্রচার করতে থাকে। আলী (রা)-এর বিরুদ্ধে তারা মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করেছিল।

 এই খারেজীরা পরবর্তিতে আলী (রা), মুয়াবিয়া (রা) ও আমর ইবনুল আস (রা) কে একই দিনে ভিন্ন ভিন্ন স্থানের মসজিদে হত্যার পরিকল্পনা করে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমর ইবনুল আস (রা) সেদিন মসজিদে আসেননি, তাই তাঁর জীবন রক্ষা পেল। মুয়াবিয়া (রা) বেঁচে যান, তবে তিনি সামান্য আঘাত পান। অন্যদিকে আলী (রা) মসজিদে নামায পড়তে যাওয়ার সময় আততায়ী আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম খারেজীর তরবারির আঘাতে ১৭ই রমাদান ৪০ হিজরী তারিখে শাহাদাত বরণ করেন। এথেকেই মুসলিদের মধ্যে জঙ্গিবাদ, ইসলামের নামে গুপ্ত হত্যা শুরু হয়। এই খারেজীদের সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো, এদের প্রায় সকলেই ছিলো যুবক, অত্যন্ত ধার্মিক, সৎ ও নিষ্ঠাবান, সারারাত তাহাজ্জুদ আদায় করতো। সারাদিন যিকর ও কুরআন পাঠে রত থাকতো। তাদের ক্যাম্পের পাশ দিয়ে গেলে শুধু কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজই শুনা যেত। কুরআন পাঠ করলে বা শুনলে তারা আল্লাহর ভয়ে ও আবেগে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে যেত। এজন্য তাদেরকে কুররা বা কুরআন পাঠকারী দল বলে অভিহিত করা হতো। পাশাপাশি এরা অত্যন্ত হিংস্র ও সন্ত্রাসী ছিল। অনেক নিরপরাধ মুসলিম তাদের হাতে প্রাণ হারায়। এরা মনে করত যে, ইসলামী বিধিবিধানের লঙ্ঘন হলেই মুসলিম ব্যক্তি কাফিরে পরিণত হয়। এমন ব্যক্তি দেরকে গুপ্ত হত্যা করা বৈধ। শুধু তাই নয় যারা আলী (রা) কে কাফির মনে করতো না এরূপ সাধারণ অযোদ্ধা, পুরুষ, নারী ও শিশুদেরও এরা হত্যা করত। ইসলামের ইতিহাসে আরেকটি সংগঠনের অস্তিত্ব দেখা যায় যারা খারেজী ফিরকার মত ভিন্নমতালম্বীদের গুপ্ত হত্যা করত, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত, নিজেদেরকে সত্যিকার মুসলিম মনে করত, এদেরকে ‘বাতেনী হাশাশীন’ নামে অভিহিত করা হত। 

জঙ্গিবাদ বনাম জিহাদ:মুসলিম জঙ্গিবাদী বিপথগামীরা সাধারণত তাদের কর্মকান্ডের জন্য ইসলামের পবিত্র পরিভাষা জিহাদ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। তারা জিহাদের নামেই তাদের অধিকাংশ কর্মকান্ড পরিচালনা করছে, কোন কোন ক্ষেত্রে কিতালের প্রসঙ্গ তুলে ধরছে। অথচ এই জিহাদ ও কিতাল বৈধ কোন কর্তৃপক্ষ ছাড়া অর্থাৎ রাষ্ট্র বা সরকার ছাড়া কেউ ঘোষণা দিতে পারে না। এ বিষয় আলোচনা করতে হলে প্রথমে আমাদেরকে জিহাদ ও কিতালের তাৎপর্য বুঝতে হবে। 

জিহাদের মূল শব্দ হলো (جُهْدٌ) জুহদুন। যার শাব্দিক অর্থ চেষ্টা করা, প্রচেষ্টা চালানো। পারিভাষিক অর্থ হলো চূড়ান্ত বা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানো। আর ইসলামিক পরিভাষায় ও ইসলামী ফিক্হে জিহাদ বলতে মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় যুদ্ধকেই বুঝানো হয়। জিহাদ একটি সাধারণ ও ব্যাপকার্থক শব্দ। আলকুরআন ও আল হাদীসে জিহাদকে বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ তুলে ধরা হলো। যেমন আলকুরআনে বলা হয়েছে-
(وَجَاهِدُوْا فِى اللَّهِ حَقَّ جِهَادِه ) 
‘‘তোমরা আল্লাহর জন্যে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত।’’ 

আবদুল্লাহ ইবন আববাস (রা) বলেন : এখানে ‘‘হাক্কা জিহাদিহি’’ অর্থ হল- জিহাদে পূর্ণ শক্তি ব্যয় কর এবং তিরস্কারীর তিরস্কারে কর্ণপাত কর না। দাহ্কাক ও মুকাতিল (রহ) বলেন : আল্লাহর জন্য কাজ কর যেমন করা উচিত। এবং আল্লাহর ইবাদাত কর যেমন করা উচিত। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন : এখানে জিহাদ নিজ প্রবৃত্তি ও অন্যায় কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে কাজ করাকে বুঝানো হয়েছে। 
আরেক জায়গায় কাফির ও মুনাফিকদের সাথে যুদ্ধ করাকে জিহাদ বলা হয়েছে। 
মহান আল্লাহ বলেন : 
ياَ اَيُّهَا النَّبِىُُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْــ
‘হে নবী, কাফির ও মুনাফিকদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন।’ 

কষ্ট স্বীকার ও ধৈর্য ধারণের অর্থে জিহাদ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন : 
وَمَنْ جَاهَدَ فَإِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهِ إِنَّ اللَّهَ لَغَنِىُّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ ــ
‘যে কষ্ট স্বীকার করে, সে তো নিজের জন্যই কষ্ট স্বীকার করে। আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।’ 
وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَــ
‘‘আর যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎ কর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।’’ 
فَلاَ تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًا كَبِيْرًاــ
‘‘অতএব আপনি কাফিরদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের সাথে এর সাহায্যে কঠোর সংগ্রাম করুন। 

উপরোক্ত তিনটি আয়াতে মুসলিমদেরকে যুল্ম নির্যাতনের সময় ধৈর্যধারণ করতে বলা হয়েছে। অনুরূপ ভাবে অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য ন্যায়ের কথা বলাকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ বলা হয়েছে- 

‘‘একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাস করলেন : সর্বোত্তম জিহাদ কোনটি? তিনি বললেন : অত্যাচারী শাসকের নিকট সত্য ও ন্যায়ের কথা বলা।’’ 
হজকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ বলা হয়েছে- 

‘পুণ্যময় হজ্জ হলো সর্বোত্তম জিহাদ।’ 

জিহাদের আরেকটি সমার্থক শব্দ হচ্ছে قتال (কিতাল)। কিতাল অর্থ পরস্পর যুদ্ধ করা, লড়াই করা। আলকুরআন ও আল হাদীসে বিভিন্ন জায়গায় কিতালের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন : 
وَقَاتِلُوْا فِىْ سَبِيْلِ اللّهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلاَ تَعْتَدُوْا إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَــ
‘‘আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’’ অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেছেন : 
وَقَاتِلُوْا الْمُشْرِكِيْنَ كَآفَّةً كَمَا يُقَاتِلُوْنَكُمْ كَآفَّةًــ
‘‘আর তোমরা মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে।’’ 

উপরোক্ত আলোচনায় জিহাদ শব্দটি যে ব্যাপক অর্থবোধক তা আমাদের সামনে স্পষ্ট। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। 

বস্ত্ততঃ জিহাদের কাজ শুরু হয় মানুষের ব্যক্তি জীবনের আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টার মাধ্যমে। তারপর নিজের আত্মীয় স্বজন ও অন্যান্য মানুষের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর মাধ্যমে। এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক অব্যাহত প্রচেষ্টা ও প্রক্রিয়া। সর্বশেষ প্রয়োজনে যুদ্ধের মাধ্যমে জিহাদের অর্থ প্রকাশ পেয়ে থাকে। আর সেটি হবে সামনা সামনি যুদ্ধ যা কিতাল এবং তা হবে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের আদেশে এবং তাঁর নেতৃত্বে। সেজন্য ইসলাম জিহাদ ও কিতালের ক্ষেত্রে অনেক শর্ত আরোপ করেছে। যার অন্যতম শর্ত হলো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। রাষ্ট্রের প্রধান বা নেতাই জিহাদের বা কিতালের ঘোষণা দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : 

‘‘রাষ্ট্রপ্রধান হলো ঢাল, তাঁর পেছনে থেকেই যুদ্ধ করতে হবে।’ 
অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে : 

‘‘রাষ্ট্র প্রধান ধার্মিক হোক অথবা অধার্মিক হোক উভয় ক্ষেত্রে তাঁর আনুগত্যে জিহাদ করা তোমাদের উপর কর্তব্য।’’ যদি কোন দল বা গোষ্ঠীকে অথবা কোন দল বা আমীরকে জিহাদ বা কিতালের ঘোষণা দেয়ার অধিকার দেয়া হয় তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, মারামারি ও গোলযোগ শুরু হয়ে যাবে। এভাবে গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে যার পরিণতিতে দেশ ও জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আলী (রা) ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মাঝে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা ছিল রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ। বৈধ চতুর্থ খলিফা আলী (রা)-এর আনুগত্য না করার কারণেই আলী (রা) মুয়াবিয়া (রা)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তদরূপ উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা)-এর যুদ্ধও রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ ছিল।

 আত্মঘাতী হত্যার মাধ্যমে মানুষদেরকে হত্যা করা, নিরীহ জনগণকে হত্যা করা, কিংবা গুপ্ত হত্যা করা, পেছন থেকে হত্যা করা, বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা করা, জান-মাল ধ্বংস করা কিছুতেই জিহাদ হতে পারে না। বিগত দেড় হাজার বৎসর ধরে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ‘জিহাদ’ নামে এরূপ অপকর্ম কখনোই দেখা যায়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত যুদ্ধের ময়দান ছাড়া কোথাও কোন নিষ্ঠাবান মুসলিম ব্যক্তিগতভাবে বা দলগতভাবে কাউকে গুপ্ত হত্যা করেছে, আত্মহত্যার মাধ্যমে মানুষ হত্যা করেছে, কারো বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করেছে, কোন জনপদে বোমাবাজি ও অরাজকতা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, ইত্যাদির কোন নজির দেখা যায় না। সুতরাং জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডকে জিহাদের নামে চালিয়ে দেয়া মোটেও বৈধ নয়। আলকুরআনে জিহাদ ও তৎসম্পর্কিত শব্দ ৩৬বার এসেছে এবং প্রতিবারই ন্যায়নীতির সংগ্রামের কথা বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে জঙ্গিবাদ হলো অন্যায়ভাবে মানুষদেরকে আক্রমণ করা, তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং নিরীহ লোকজনকে হত্যা করা ইত্যাদি।

ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ: বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে জঙ্গিবাদের যে উত্থান ও তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়, তার সাথে শুধু গুটি কতেক মুসলিম জড়িত। বিশ্বের সকল বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদগণ এবং মূলধারার সকল ইসলামী সংগঠন ও সংস্থা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, এধরনের ব্যক্তিরা বিভ্রান্ত, বিপথগামী। এরা ইসলামের শত্রুদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। ইসলামের শত্রুরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ওরা এদেরকে ইসলামের ভাব-মর্যাদা ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করছে। এসকল ব্যক্তি কোনভাবেই ইসলামের জন্য কল্যাণকর হতে পারেনা। তারা ইসলামকে বিশ্ববাসীর সামনে বিকৃত ও কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। 

জঙ্গিবাদীরা সাধারণত সে সকল জঘন্য কর্মকান্ড ঘটিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে হাসিল করতে চায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- (ক) বোমাবাজি করে অরাজকতা সৃষ্টি করা। (খ) মানুষ হত্যা ও (গ) আত্মঘাতী হামলা। 
বোমাবাজি ও অরাজকতা সৃষ্টি করা :

জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিভিন্ন ধরনের জঘন্য কর্মকান্ড সংগঠিত করে থাকে, তার মধ্যে একটি হল বোমাবাজি করে অরাজকতা সৃষ্টি করা, সমাজে বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ করা, দাংগা-হাংগামা করা। পবিত্র কুরআনে এগুলোকে ‘ফিতনা’ ও ‘ফাসাদ’ শব্দদয় দ্বারা অভিহিত করা হয়েছে। ফিতনা-ফাসাদ মহান আল্লাহর কাছে অতীব ঘৃণিত একটি মহাপাপ, কবীরা গুনাহ। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ সমস্ত কাজকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এগুলোর জন্যে ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : 

‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না।’ 
وَلاَ تَعْثَوْْا فِى الأَرْضِ مُفْسِدِيْنَــ
‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ তথা দাংগা হাংগামা করে বেড়িও না।’ 

‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।’ 
وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلاَ تَبْغِ الْفَسَادَ فِىْ الأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لاَ يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ 
‘তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অুনগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ 

‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারী, দুষ্কর্মীদের কর্ম সার্থক করেন না।’ 
মহান আল্লাহ ফিত্না সম্পর্কে ইরশাদ করেন : 
وَصَدٌّ عَنْ سَبِيْلِ اللّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِنْدَ اللّهِ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَِتْلِــ
‘আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিষ্কার করা, আল্লাহর নিকট বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফিতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ। 
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ـ
‘আর ফিতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ 

উপরোক্ত আয়াতসমূহে ফিতনা-ফাসাদ তথা অরাজকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা, বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ফিতনা-ফাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা জঙ্গিবাদকে হত্যার চেয়েও কঠিন ও গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের অপরাধ হত্যার সমতুল্য। এ প্রসঙ্গে তাফসীর তাফহীমুল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘‘নর হত্যা নিঃসন্দেহে একটি জঘন্য কাজ কিন্তু কোনো মানবগোষ্ঠী বা দল যখন জোরপূর্বক নিজের স্বৈরতান্ত্রিক ও যুল্মতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়, সত্য গ্রহণ থেকে লোকদেরকে জোরপূর্বক বিরত রাখে এবং যুক্তির পরিবর্তে পাশবিক শক্তি প্রয়োগে জীবন গঠন ও সংশোধনের বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টার মুকাবিলা করতে শুরু করে তখন সে নরহত্যার চাইতেও জঘন্যতম অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। 

এছাড়া পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা আল্লাহ ঘোষণা করেন : 
إِنَّمَا جَزَاء الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللّهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَسْعَوْنَ فِى الأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوْا أَوْ يُصَلَّبُوْا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيْهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلافٍ أَوْ يُنْفَوْا فِى الأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْىٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌــ
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখিরাতে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ 

মানব হত্যা: জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আরেকটি জঘন্য অপরাধ করে থাকে তা হলো মানব হত্যা। এটা বিভিন্নভাবে করে থাকে, গুপ্তভাবে, পেছন থেকে, বোমা মেরে কিংবা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দিয়ে। অথচ মানব জীবন মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্ত সম্মানিত ও পবিত্র। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِىْ آدَمَ وَحَمَلْنهُمْ فِىْ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنهُمْ مِّنَ الطَّيِّبتِ وَفَضَّلْنهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلاً
নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি, তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্ত্তর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। 

সেজন্য মহান আল্লাহ একজন মানবের জীবন সংহারকে সমগ্র মানবগোষ্ঠীর হত্যার সমতুল্য সাব্যস্ত করেছেন। মানব জীবনের নিরাপত্তার প্রতি ইসলাম যতটা গুরুত্ব দিয়েছে অন্য কোন ধর্মে বা মতাদর্শে এর নযির নেই। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِىْ إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِى الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًاــ
‘এ কারণে আমি বনী ইসরাইলকে এরূপ লিখে দিয়ে ছিলাম যে, যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কিংবা ভূ-পৃষ্ঠে কোন গোলযোগ সৃষ্টি করা ছাড়াই কাউকে হত্যা করলো সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করলো আর যে ব্যক্তি কোন একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই রক্ষা করলো।’ 
যে ব্যক্তি সংগত কারণ ছাড়া একজন মানুষকে হত্যা করে সে কেবল একজন মানুষকেই হত্যা করে না, বরং সে সমগ্র মানবতাকে হত্যা করে, অর্থাৎ সে একজন মানুষকে হত্যা করে এ কথাই প্রমাণ করলো যে তার মন-মানসিকতায়, চিন্তা-চেতনায় অন্য মানুষের প্রতি সামান্যতম সম্মান, মর্যাদাবোধ ও সহানুভূতির চিহ্ন নেই। 

সেজন্য মহান আল্লাহ সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যা যেভাবেই হোক না কেন নিষিদ্ধ করেছেন। নিম্নে এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন ও হাদীস হতে কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হলো। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : 

‘আল্লাহ যে প্রাণকে হারাম করেছেন তাকে ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া হত্যা করো না।’ 
ন্যায়সংগত কারণ তিনটি যা ইমাম আল বুখারী (র) ও ইমাম মুসলিম (র) আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের (রা) রিওয়ায়াতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : 
‘যে মুসলিম আল্লাহ এক এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়, তার রক্ত হালাল, কিন্তু তিনটি কারণে তা হারাম হয়ে যায়। 
(১) বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সে যদি যিনা করে, তবে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করাই তার শরীয়তসম্মত শাস্তি। 
(২) সে যদি অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করে, তবে তার শাস্তি এই যে, কিসাস হিসেবে তাকে হত্যা করা হবে। 
(৩) যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে, তার শাস্তিও হত্যা।’ (আলোচ্য হাদীসে এবং তৎসম্পর্কিত কুরআনের আয়াতে কিসাস নেয়ার অধিকার নিহত ব্যক্তির অভিভাবককে দেয়া হয়েছে। যদি তার রক্ত সম্পর্কিত কোন অভিভাবক না থাকে তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার প্রধান এ অধিকার পাবে। কারণ সরকারও একদিক দিয়ে সকল মুসলিমের অভিভাবক।)

কেউ কেউ ন্যায় সংগত হত্যার কারণ উপরোক্ত তিনটির সাথে আরো তিনটি বর্ণনা করেন : তাহলো-
(৪) জিহাদের ময়দানে সত্যদ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের হত্যা করা।
(৫) ডাকাতি অথবা রাজপথে রাহাজানি ইত্যাদি অপরাধের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা।
(৬) কোন ব্যক্তি যদি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে জঙ্গিপন্থা অবলম্বন, সন্ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টি, জনজীবনে আতঙ্ক-অশান্তি সৃষ্টি করে এবং ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পতন ঘটানোর চেষ্টা করে তাকে হত্যা করা। 
তবে উপরোক্ত ছয়টি কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে মানুষকে হত্যা করা যায় না। কিন্তু এ সকল অবস্থায় মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার অধিকার শুধু রাষ্ট্রীয় সরকার বা কর্তৃপক্ষের জন্য নির্ধারিত, অর্থাৎ আদালত রায় দেবে আর সরকার কর্তৃক নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারীরা তা বাস্তবায়ন করবে। জনগণকে কোন অবস্থাতেই আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার অধিকার দেয়া হয়নি।

 মহান আল্লাহ ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যা নিষিদ্ধ সম্পর্কে আরো ঘোষণা করেন : 
وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَه عَذَابًا عَظِيْمًاــ
‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানেই সে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তার উপর অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্ত্তত করে রাখবেন।’ 
وَالَّذِيْنَ لاَ يَدْعُوْنَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا اخَرَ وَلاَ يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِىْ حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلاَ يَزْنُوْنَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًاـــيُضعَفْ لَه الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهِ مُهَانًا 
‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদাত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সংগত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করবে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামাতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।’
নিম্নে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো, যা সুস্পষ্টভাবে ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যাকে সম্পূর্ণ নিষেধ করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন : 

‘হে লোক সকল! তোমাদের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরুর উপর তোমাদের হস্তক্ষেপ হারাম করা হলো, তোমাদের আজকের এই দিন, এই (যিলহজ্জ) মাস এবং এই (মক্কা) নগরী যেমন পবিত্র ও সম্মানিত, অনুরূপভাবে উপরোক্ত জিনিসগুলোও সম্মানিত ও পবিত্র। সাবধান! আমার পর তোমরা পরস্পরের হন্তারক হয়ে কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে যেও না’ 

‘তোমরা সাতটি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাক। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, শরীয়াতের বিধিবর্হিভূত কোন অবৈধ হত্যাকান্ড ঘটানো, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, সুদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানো এবং সরলমতি সতী মহিলাদের ওপর ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।’ 

‘যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি : আল্লাহর নিকট (বিনা অপরাধে) কোন মু’মিনের হত্যাকান্ড সমগ্র পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চেয়েও মারাত্মক ঘটনা।’ 

‘কোন মুসলিম ব্যক্তির নিহত হওয়ার তুলনায় সমগ্র পৃথিবীর পতন আল্লাহর দৃষ্টিতে অতি তুচ্ছ ব্যাপার। 

‘মুমিন যে পর্যন্ত অবৈধভাবে কাউকে হত্যা না করে, সে পর্যন্ত সে ইসলামের উদারতার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে।’
আল কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসমূহ ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যাকে কোনভাবেই সমর্থন করে না, বরং সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করে, অধিকন্তু ন্যায় সংগত হত্যার বিধান রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে, কোন দল বা গোষ্ঠীকে এই অধিকার দেয়া হয়নি। যারা এ ধরনের কাজ করবে তাদের পরিণাম হবে জাহান্নাম। 

আত্মঘাতী হামলা বা সুইসাইড স্কোয়াড: জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অপর যে জঘন্য কর্মটি করে থাকে সেটা হলো আত্মঘাতী হামলা। আর এটি করে সাধারণতঃ সুই সাইড স্কোয়াড বা আত্মঘাতী দল গঠনের মাধ্যমে। কিছু সহজ-সরল সাদাসিধে মুসলিমকে জান্নাত পাবার লোভ, কিংবা অন্যান্য পুরস্কারের কথা বলে এ কাজে নিয়োজিত করে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ যে ভাবে অপরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, সেভাবে নিজের জীবনকেও ধ্বংস করতে নিষেধ করেছেন। আত্মহত্যা করতে বারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত ও হাদীস উদ্ধৃত করা হলো। মহান আল্লাহ ইরশাদ 
করেন : 
وَلاَ تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِــ
‘তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।’ 
وَلاَ تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًاــ
‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর দয়ালু।’ 

‘যে ব্যক্তি নিজেকে শ্বাসরুদ্ধ করবে (আত্মহত্যা করবে) সে জাহান্নামে নিজেকে শ্বাসরুদ্ধ করবে। আর যে নিজেকে আঘাত করবে (আত্মহত্যা করবে), সে জাহান্নামেও নিজেকে আঘাত করবে।’ 

‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামে বসেও সে অনবরত উচ্চ স্থান থেকে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের মধ্যে বসেও সে অনন্তকাল ধরে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোন লোহার অস্ত্র দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে বসে অনন্তকাল ধরে সেই অস্ত্র দিয়েই নিজেকে কোপাতে থাকবে। 

‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি আহত হয়ে কষ্ট পাচ্ছিল। তাই সে এক খানা ছুরি দ্বারা নিজের দেহে আঘাত করলো। ফলে রক্তপাত হয়ে সে মারা গেল, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার বান্দা আমাকে ডিংগিয়ে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম
‘যে ব্যক্তি কোন জিনিস দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামাতের দিনও তাকে সে জিনিস দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। কোন মু’মিনকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার শামিল, আর কোন মু’মিনকে কাফির বলা তাকে হত্যা করার শামিল।’ 

পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত কয়েকটি আয়াত ও কয়েকটি হাদীসের আলোকে আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কোন অবস্থায় আত্মহত্যা করা যাবে না। আত্মঘাতী হামলা করে মানুষ হত্যা তো দূরের কথা, উপরোক্ত আলোচনায় আরো স্পষ্ট হয়, যারা এই অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। 


জঙ্গিবাদ দমনে করণীয়: আমরা মনে করি জঙ্গিবাদ কোন বড় ধরনের সমস্যা নয়। গুটি কতেক ব্যক্তি এর সাথে জড়িত। এরা অসংগঠিত ও অপরিকল্পিত। যদি সদিচ্ছার সাথে কিছু সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া যায় তাহলে এ সমস্যাটি সহজে দূর করা যাবে বলে বিশ্বাস করি, নিম্নে এ লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব পেশ করা হলো। 
এদেরকে হিদায়াতের জন্য আলিম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের সম্পৃক্ত করতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে যে, জঙ্গিবাদ কোনক্রমেই ইসলামের পথ নয়। এটা সম্পূর্ণভাবে জাহান্নামের পথ। 

দেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদের ইমাম খতিবদের সহযোগিতা নিতে হবে, তারা যেন জুমার খুতবায় ও অন্যান্য সময়ে মসজিদগুলোতে জঙ্গিবাদের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সাধারণ মুসলিমদেরকে অবহিত করতে পারেন। 

জনগণকে সাথে নিয়ে এই জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে। তাই জনগনের বিশ্বাস, ধর্ম-বিশ্বাস, তাদের লালিত মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে সম্মান করতে হবে। এ সবের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 


আমরা সকলে জানি, ইসলাম অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা ও মহান আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করা। মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন মানবকুলের শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, প্রগতি ও উন্নতির জন্য মনোনিত করেছেন ইসলাম ধর্মকে, অতএব একজন মুসলিম অপর মুসলিমের অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে না। তাইতো একজন আরেক জনের সাথে দেখা হতেই ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোধন করে। যার অর্থ ‘‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’’ তাহলে কিভাবে সে অন্যকে অশান্তিতে ফেলে দেবে? অন্যের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে? সুতরাং ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদের কোন সম্পর্ক নেই। বিশ্বের এমনকি বাংলাদেশেরও কোন প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত ইসলামী দল বা প্রতিষ্ঠান কোন ধরনের জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নেই। শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় হাজার বছর অপেক্ষা করতে হলেও তা করা উচিত। জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দিয়ে একে তো দ্রুত ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, আর করা গেলেও তার কোন শুভ ফল আশা করা যায় না। এ কথা সর্বমহলে স্বীকৃত যে, ইসলাম তার অন্তর্নিহিত স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, সম্প্রীতি, উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার মাধ্যমে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, তরবারি, জঙ্গিবাদ কিংবা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নয়। তবে নতুন গজিয়ে ওঠা কিছু গ্রুপ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা জিহাদের নামে ইসলামের নামে বিভিন্ন অরাজকতামূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করছে। অথচ এগুলোর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, যা আমরা ইতিপূর্বে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে বুঝতে পেরেছি। ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ হারাম। বোমাবাজি, মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি ও আত্মঘাতী তৎপরতা ইত্যাদি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা এগুলো করছে তারা বিভ্রান্ত, ইসলাম বিরোধীদের ক্রীড়নক। এদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করা প্রয়োজন। 


রেফারেন্সঃ.
. আহমদ শরীফ সম্পাদিত সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা-২১৬।
. মোহাম্মদ আলী ও অন্যান্য সম্পাদিত, বাংলা-ইংরেজী অভিধান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ২০০০, পৃষ্ঠা-২১৬।
. A. S. Hornby, Oxford Advanced Learner’s Dictionary, Oxford University Press, 5th edition, 1995. Page-738.
. A. M. Macdonald, Chambers Twenticth Century Dictionary, The Pitman Press, Great Britain, 1981, Page- 430.
. প্রাগুক্ত।
. আল্ কামূসুল্ আস্রী, ইলিয়াস আনতুন ইলিয়াস, দারুল জাইল, বৈরুত, পৃষ্ঠা- ২৬৫।
. সূরা আল্ আন্ফাল : ৬০।
. বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, পৃষ্ঠা-২৬৬।
. সংসদ বাঙ্গালা অভিধান, কলকাতা : সাহিত্য সঙসদ, ২২তম মুদ্রণ, ১৯৯৮, পৃষ্ঠা-৬৬১।
. বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, পৃষ্ঠা-৫৪১।
. The New Encyclopaedia Britannica, USA-2002, Vol. II, Page- 650.
. ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস, নূরুল ইসলাম, মাসিক পৃথিবী, ফেব্রুয়ারী, ২০০৯, পৃষ্ঠা-৩৮।
. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৩৮।
. দৈনিক প্রথম আলো, ২ এপ্রিল ২০০৯।
. দৈনিক যুগান্তর, ২ এপ্রিল ২০০৯।
. দৈনিক প্রথম আলো, ২ এপ্রিল ২০০৯।

. ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, আস্ সুন্নাহ পাবলিকেসন্স, ঝিনাইদহ, আগস্ট, ২০০৬, পৃষ্ঠা-১১।
. Encyclopaedia Britannica, Articles : Terroresm, Zealet and Ideology. 
. ইসলামের ইতিহাস, কে আলী, আজিজিয়া বুক ডিপো, ঢাকা, পঞ্চদশ সংস্করণ, অষ্টম প্রকাশ, ২০০৭, পৃষ্ঠা-১৫৬।
. ‘খারেজী’ অর্থ দল ত্যাগী। এরা হারুরীয় নামে অভিহিত হয়ে থাকে, কারণ এরা হারুরা গ্রামেই প্রথমে মিলিত হয়ে হযরত আলীর (রা) বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে এবং তাঁর দল ত্যাগ করে। খারেজী ইসলামের একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায়, তারা কেবল আবু বকর (রা) ও উমার (রা)কে আইন সম্মত খলীফা মনে করত এবং অপর সকলকে বলপূর্বক খিলাফত দখলকারী বলে অভিহিত করত। তারা রাজনীতিতে গণতন্ত্রী এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে গোঁড়া ছিল। (ইসলামের ইতিহাস, কে আলী, পৃষ্ঠা-১৭২)
. সূরা ইউসুফ : ৪০ ও ৬৭।
. সূরা আল্ হুজুরাত : ৯।
. ইসলামের ইতিহাস, কে আলী, পৃষ্ঠা : ১৭২-১৭৩।
. ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, ড. খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, পৃষ্ঠা : ১৭২-১৭৩।
. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ২৮।
. এরা হলো ইসমাঈলীয়া ফাতিমীয়া শিয়া মতবাদের ইমাম মুনতাসির বিল্লাহ (৪৮৭)-এর জেষ্ঠ্য পুত্র নিযার-এর খলিফা হাসান ইবনু সাবাহ নামক এক ইরানীর অনুসারী। এরা প্রচার করে যে, মানবীয় জ্ঞান, বুদ্ধি বা বিবেক দিয়ে আলকুরআন ও ইসলামের নির্দেশ বুঝা সম্ভব নয়। আলকুরআনের সঠিক ও গোপন ব্যাখ্যা বুঝতে ইমামের মতামতের উপরই নির্ভর করতে হবে। আর সেই ইমাম লুকায়িত আছেন। তার প্রতিনিধি হিসেবে হাসান নিজে কাজ করছেন। তিনি তার ভক্তদের মধ্যে হতে একদল আত্মঘাতী ফিদায়ী তৈরি করেন। যারা তার নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে আত্মহননসহ যে কোন কাজের জন্য প্রস্ত্তত থাকত। ইমাম যাকেই শত্রু মনে করতেন তাকে গুপ্ত হত্যা করার নির্দেশ দিতেন। হাসানের মুত্যৃর পরও এরা তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে, তৎকালীন মুসলিম শাসকগণ এদের দমনে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে ৬৫৪ হিজরীতে (১২৫৬ খৃ.) হালাকু খাঁর বাহিনী এদেরকে নির্মূল করে। (ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, পৃষ্ঠা- ২৮)।
. ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস : কারণ ও প্রতিকার, বি. এম মফিজুর রহমান আল আয্হারী, ইউনিক লাইব্রেরী, চট্টগ্রাম, ২০০৬, পৃষ্ঠা-১৪।
. জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা ও ইসলাম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, প্রকাশনা বিভাবগ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ডিসেম্বর, ২০০৫, পৃষ্ঠা্-১৬।
. দৈনিক নয়া নিগন্ত, ১১.৪.০৯, পৃষ্ঠা-১৬।
. আর্ রায়েদ, জুবরান মাসউদ, দারুল ইলমে লিল্মালায়ীন, বৈরুত, লেবানন, ৩য় প্রকাশ-১৯৭৮, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৫৩১।
. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-১, পৃষ্ঠা-৫৩১।
. ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ড. খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, পৃ-৩৪।
. সূরা আল হজ : ৭৮, (অনুবাদ : মায়ারেফুল কুরআন, মুফতী শফী আহমাদ)।
. সন্ত্রাস, সন্ত্রাসবাদ, ও এর প্রতিকার : ইসলামী দৃষ্টিকোন, ড. মোঃ ময়নুল হক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ৪৩ বর্ষ তয় সংখ্যা; জানুয়ারী-মার্চ ২০০৪, পৃষ্ঠা-১৩। 
. সূরা আত্ তাওবা : ৭৩, সূরা আত্ তাহরীম : ৯, সূরা আল্ ফুরকান : ৫৩। 
. সূরা আল্ আনকাবুত : ৬। 
. সূরা আল্ আন্কাবুত : ৬৯।
. সূরা আল্ ফুরকান : ৫২।
. রিয়াদুস সালিহীন, আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া বিন শরফ আল্ নাবাবী, হাদীস নং- ১৯৫।
. প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ১২৭৩।
. আর রায়েদ, জুবরান মাসউদ, পৃষ্ঠা নং- ১১৩৫।
. সূরা আল বাকারাহ : ১৯০। 
. সূরা আত্ তাওবাহ : ৩৬। 
. সহীহ আল্ বুখারী, ৩য় খন্ড, হাদীস নং- ১০৮০।
. আস্ সুনান, আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, হাদীস নং- ১৮।
. জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা ও ইসলাম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, পৃষ্ঠা-১৭। 
. সূরা আল্ আ’রাফ : ৫৬ : ৮৫।
. সূরা আল্ বাকারাহ্ : ৬০, সূরা হুদ : ৮৫, সূরা আশ্ শুআরা : ১৮৩, সূরা আল ‘আনকাবুত : ৩৬।
. সূরা আল্-আ‘রাফ : ৭৪। 
. সূরা আল্ কাসাস : ৭৭।
. সূরা ইউনুস : ৮১।
. সূরা আল বাকারাহ : ২১৭।
. সূরা আল বাকারাহ : ১৯১।
. তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা, ১ম সংস্করণ, ১৯৮৭, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৬৯।
. সূরা আল্ মায়িদাহ : ৩৩। 
. সূরা বনী ইসরাঈল : ৭০। 
. সূরা আল্ মায়িদা : ৩২।
. সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৩, সূরা আল্-আনয়াম : ১৫১। 
. তাফসীর মাআরেফুল কুরআন, মুফতী মুহাম্মদ শাফী (র), (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর) পৃষ্ঠা-৭৭৬। 
. ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস : কারণ ও প্রতিকার, বি.এম. মফিজুর রহমান আল আযহারী, পৃষ্ঠা-৬৫। 
. সূরা আন্ নিসা : ৯৩।
. সূরা আল্ ফুরকান : ৬৮-৬৯।
. সহীহ মুসলিম, كتاب الحج، باب حجة النبى صلى الله عليه وسلم ৪/৪৩২ হাদীস নং : ১৪৪/১২১৮।
. সহীহ মুসলিম, كتاب الايمان، باب بيان الكبائر وأكبرها ৩৬০, হাদীস নং : ১৪৬/৯০।
. সুনান আন নাসাঈ, كتاب تحريم الدم، باب تعظيم الدم ৭/৮৮, হাদীস নং : ৩৯৯২।
. সুনান আত্ তিরমিযী كتاب الديات، باب ماجاء فى تشديد قتل المؤمن ৪/৫৪৬, হাদীস নং : ১৩৯৫।
. সহীহ আল বুখারী, كتاب الريات، باب قول الله ومن يتقل مؤمنا ১২/১৯৪, হাদীস নং- ৬৮৬২।
. সূরা বাকারাহ : ১৯৫।
. সূরা আন নিসা : ২৯।
. সহীহ আল বুখারী, كتاب الجنائز، باب ماجاء فى قتل النفس ৩/২৬৮, হাদীস নং- ১৩৩৬।
. সহীহ আল বুখারী, كتاب الطب، باب شرب السم ১/৩৯৫, হাদীস নং- ১৭৫/১০৯।
. সহীহ আল্ বুখারী, كتاب أحاديث الأنبياء، باب ماذكر عن بنى إسرائيل ৬/৫৭২, হাদীস নং- ৩৪৬৩।
. সহী আল্ বুখারী, كتاب الأدب، باب ماينهى عن السباب واللعن ১০/৪৭৯, হাদীস নং : ৬০৪৭।

0 comments