মৃত্যু

আল্লহ বলেন  : প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। --আম্বিয়া-৩৫ 

মৃত্যু এমন এক বিষয় যার থেকে কারো রেহাই নেই অথচ আমরা বেমালুম তা ভুলে আছি আল্লাহ আমাদের মনে করিয়ে দেন এভাবে :
সুরা তাকাসুর -পরম করুনাময় ও অত্যন্ত দয়ালু আল্লাহর নামে

১। প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে অসতর্ক করে রাখে।
২। এমনকি তোমরা কবর পর্যন্ত পৌছে যাও।
৩। এটা কখনও উচিত নয়, তোমরা শিগগিরই জেনে যাবে।
৪। অতঃপর এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা শিগগিরই জেনে যাবে।
৫। কখনই নয় ; যদি তোমরা নিশ্চিত জানতে।
৬। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে,
৭। অতঃপর তোমরা তা অবশ্যই দেখবে দিব্য-প্রত্যয়ে,
৮। এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিগ্গাসিত হবে।




মৃত্যু সম্পকে আল্লাহ কোরআনে আরো বলেন:
আমিই জীবনদান করি, মৃত্যুদান করি এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।
-হিজর-২৩


অনন্তর তাঁরই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমাদেরকে বলে দিবেন,যা কিছু তোমরা করছিলে। তিনিই স্বীয় বান্দাদের ওপর প্রবল। তিনি প্রেরণ করেন তোমাদের কাছে রক্ষণাবেক্ষণকারী। এমন কি, যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয়।
-আনআম-৬১


 আপনি সেই চিরঞ্জীবের ওপর ভরসা করুন, যার মৃত্যু নেই এবং তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষনা করুন। তিনি বান্দার গোনাহ্ সম্পর্কে যথেষ্ট খবরদার।
-ফুরকান-৫৮


আপনি বলুন, আল্লাহ্ই তোমাদেরকে জীবন দান করেন, অতঃপর মৃত্যু দেন, অতঃপর তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না।
-জাসিয়া-২৬


 মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে।
-ক্বাফ-১৯
 

আমি জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই এবং আমারই দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন।
-ক্বাফ-৪৩


 আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই।
-ওয়াকিয়া-৬০


 নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।
-হাদীদ-২



মৃত্যু সম্পকিত প্রশ্ন ও উত্তর

লেখকঃ শায়খ আব্দুল আযীয ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন বায রাহিমাহুল্লাহ অনুবাদঃ শিহাবউদ্দিন হোসাইন

প্রশ্ন-১. সাহাবি ইব্‌ন আব্বাস (রা) এর হাদিস দ্বারা মৃত ব্যক্তির গোসলের পানিতে বড়ই পাতা দেয়া ওয়াজিব প্রমাণিত হয়?
উত্তর- মৃতের গোসলের পানিতে বড়ই বা কুলপাতা দেয়া শরীয়ত সম্মত, তবে ওয়াজিব নয়। আলেমগণ হাদিসের নির্দেশকে মুস্তাহাব বলেছেন। কারণ কুলপাতা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য খুব কার্যকরী। কুলপাতা না পাওয়া গেলে সাবান বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করাই যথেষ্ট।

প্রশ্ন ২- এহরাম আবস্থায় মৃত ব্যক্তির গোসলের হুকুম কি?

উত্তর- এহরাম অবস্থায় মৃত ব্যক্তিকেও অন্যান্যদের ন্যায় গোসল দিতে হবে, তবে তার গাঁয়ে সুগন্ধি মাখবে না এবং তার মুখ ও মাথা ঢাকবে না। তার কাফন পাগড়ি ও জামা ব্যতীত শুধু এহরামের কাপড়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এহরাম অবস্থায় মৃত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে। এহরাম অবস্থায় মৃত ব্যক্তির হজের অবশিষ্ট কাজ অন্য কাউকে সম্পূর্ণ করতে হবে না, তার মৃত্যু আরাফাতে অবস্থানের পর বা আগে যখনই হোক। কারণ এ ব্যাপারে রাসূলের কোন নির্দেশ নেই।

প্রশ্ন ৩- নারী ও পুরুষকে কাফন কাপড় পরানোর নিয়ম কি?
উত্তর- জামা ও পাগড়ী ব্যতীত পুরুষকে সাদা তিন কাপড়ে এবং নারীকে ইযার, কামিস, উড়না ও বড় দু’চাদরসহ মোট পাঁচ কাপড়ে কাফন দেয়া উত্তম। এ ছাড়া সতর ঢেকে যায় এমন এক কাপড়ে নারী কিংবা পুরুষকে কাফন দেয়াও বৈধ।

প্রশ্ন ৪- মৃত ব্যক্তির গোঁফ, নখ ইত্যাদি কাটার বিধান কি?
উত্তর- এ প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট কোন দলিল নেই, তাই কাটা না-কাটা উভয় সমান। কতক আলেম নখ ও গোঁফ কাটার স্বপক্ষ্যে প্রমাণ পেশ করেছেন, কিন্তু গোপন অঙ্গের পশম পরিষ্কার করা ও খতনা করার কোন দলিল নেই, তাই এ দু’কাজ কোন অবস্থাতেই করা যাবে না।

প্রশ্ন ৫- মৃত ব্যক্তির গোসলে কুলপাতা মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা কি সুন্নত?
উত্তর- যেহেতু কুলপাতা মিশ্রিত পানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় খুব কার্যকরী, তাই অনেক ফেকাহবিদ এটাকে উত্তম বলেছেন, তবে বাধ্যতামূলক নয়।

প্রশ্ন ৬- দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় রক্তের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য অনেকে প্লাষ্টিক ইত্যাদির কভার ব্যবহার করে, শরি‘আতের দৃষ্টিতে এর হুকুম কি?
উত্তর- রক্তের প্রবাহ বন্ধ করার জন্যে এ ধরণের কভার ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।

প্রশ্ন ৭- হাদিসঃ « من غسل ميتا فستر عليه ستر الله عليه يوم القيامة »

“যে ব্যক্তি কোন মৃতকে গোসল দেয়, অতঃপর সে তার দোষত্রুটি ঢেকে রাখে, আল্লাহ তালা কিয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি ঢেকে রাখবেন”। হাদিসটি কতটুকু শুদ্ধ?

উত্তর ৭- এ হাদিস সম্পর্কে আমাদের জানা নেই, তবে এ সম্পর্কে আমাদের নিকট বিশুদ্ধ হাদিস হচ্ছেঃ

«من ستر مسلما ستره الله في الدنيا والأخرة»

“যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তার দোষ ঢেকে রাখবেন”। (বুখারি ও মুসলিম) জীবিত ও মৃত সকল মুসলিম এ হুকুমের অন্তর্ভূক্ত।

প্রশ্ন ৮- সাতবার ধৌত করার পরও যদি মৃত ব্যক্তি পরিষ্কার না হয়, তাহলে এর অধিক ধৌত করার অনুমতি আছে?
উত্তর - প্রয়োজনে অধিকবার ধৌত করা বৈধ।

প্রশ্ন ৯- মৃতদের গোসল দানের পদ্ধতি শিখানোর জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স খোলার বিধান কি?
উত্তর - মৃতদের গোসল দানের পদ্ধতি শিখানোর জন্য কোর্স খোলা শরীয়ত সম্মত ও একটি ভাল কাজ। অনেকে তা ভালভাবে করতে পারে না, তাই এর জন্য প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করা খুব ভাল উদ্যোগ।

প্রশ্ন ১০- মৃতব্যক্তির গোসল তার পরিবারের লোকদের দেয়া কি উত্তম?
উত্তর – না, এটা জরুরী নয়, বরং বিশ্বস্ত এবং এ বিষয়ে ভাল জ্ঞান রাখে এ রকম লোকই উত্তম।


প্রশ্ন ১১- স্বামীর গোসল তার স্ত্রীর বা স্ত্রীর গোসল স্বামীর দেয়া উত্তম না অন্য কেউ দেবে?
উত্তর - স্বামী বা স্ত্রী যদি অভিজ্ঞ হয় তাহলে তার স্ত্রী বা স্বামীকে গোসল দিতে আপত্তি নেই। যেমন আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু আনহা তার স্বামী আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গোসল দিয়েছেন।

প্রশ্ন ১২- মৃত ব্যক্তি যদি তার গোসলের জন্য কাউকে অসিয়ত করে যায়, তার অসিয়ত পুরো করা কি জরুরি?
উত্তর – হ্যাঁ, তার অসিয়ত পুরো করা জরুরি।

প্রশ্ন ১৩- মৃতের কাফনের নির্দিষ্ট বাঁধন কয়টি?
উত্তর – কাফনের বাঁধনে নির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নেই, উপরে নিচে ও মাঝে মোট তিনটিই যথেষ্ট। দু’টো হলেও আপত্তি নেই। মূল বিষয় হল কাফন যেন খুলে না যায় বরং আটকে থাকে, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া।

প্রশ্ন ১৪- মৃতের গোসলে অংশগ্রহণকারীদের নির্ধারিত কোন সংখ্যা আছে কি?
উত্তর - গোসলদাতা ও তার একজন সহায়ক, মোট দু’জনেই যথেষ্ট।

প্রশ্ন ১৫- গোসলদাতা কি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে যে, সে সালাত আদায় করত কি-না?
উত্তর – যদি বাহ্যিকভাবে মুসলিম বুঝা যায় বা মৃতকে উপস্থিতকারীগণ মুসলিম হয়, তাহলে জিজ্ঞাসার প্রয়োজন নেই। অনরূপ জানাযার সালাতের ক্ষেত্রে। অনেকে এ বিষয়টি সাধারণভেবে জিজ্ঞাসা করে, যার কারণে মৃতের ওয়রিসগণ বিব্রত ও লজ্জাবোধ করেন।

প্রশ্ন ১৬- তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে তার স্বামী গোসল দিতে পারবে?
উত্তর - তালাক যদি প্রত্যাহারযোগ্য হয় (দু’তালাক বা তিন তালাক) তাহলে মৃত স্ত্রীকে তার স্বামী গোসল দিতে পারবে অন্যথায় নয়।

প্রশ্ন ১৭- অনেক ফেকাহবিদ মন্তব্য করেছেন যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু নশ্বর এই জীবনেই সীমাবদ্ধ। এ বিষয়ে আপনাদের অভিমত কি?
উত্তর - উল্লিখিত মন্তব্য হাদিসের পরিপন্থী, তাই তার দিকে কর্ণপাত না করাই ভাল।

প্রশ্ন ১৮- গুপ্ত আঘাত ও নির্মমভাবে নিহত ব্যক্তিদের কি গোসল দেয়া হবে?
উত্তর – হ্যাঁ, তাদেরকে গোসল দেয়া হবে এবং তাদের উপর সালাত পড়া হবে। যেমন খলীফা ওমর ইব্‌ন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ও খলীফা ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন, অতঃপর তাদেরকে গোসল দেয়া হয়েছে এবং তাদের উপর জানাযা পড়া হয়েছে। অনরূপ আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু নির্মমভাবে শহীদ হয়ে ছিলেন, তাকেও গোসল দেয়া হয়েছে এবং তার উপর জানাযা পড়া হয়েছে।

প্রশ্ন ১৯- যুদ্ধের ময়দানে মৃত যদি নানা আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়, তাকেও কি গোসল, জানাযা ও কাফন দেয়া হবে?
উত্তর – হ্যাঁ, তাকেও গোসল ও কাফনসহ সব কিছু করা হবে, তার উপর জানাযা পড়া হবে। তার নিয়ত বিশুদ্ধ হলে ইনশাআল্লাহ সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে।

প্রশ্ন ২০- কাফন পরানের পর যদি রক্ত নির্গত হয় তাহলে কি কাফন পরিবর্তন করতে হবে?
উত্তর – হ্যাঁ, কাফন পরিবর্তন করবে বা ধোয়ে নিবে এবং রক্ত যেন বাহির না হয় সে ব্যবস্থা করবে।

প্রশ্ন ২১- মৃত এবং মৃতের কাফনে সুগন্ধি দেয়ার হুকুম কি?
উত্তর - মৃত যদি এহরাম অবস্থায় না হয়, তাহলে মৃত ব্যক্তির গাঁয়ে ও তার কাফনে সুগন্ধি দেয়া সুন্নত।

প্রশ্ন ২২- গোসলদাতা মৃতের দোষ-ত্রুটি বা গুণাগুণ বর্ণনা করতে পারবে?

উত্তর - ভাল কিছু প্রকাশ করতে অসুবিধা নেই, কিন্তু মন্দ কিছু প্রকাশ করবে না। কারণ এটা পরনিন্দা ও গীবতের অন্তর্ভূক্ত। নাম প্রকাশ না করে যদি বলে অনেক মৃতলোক খুব কালো ও কুৎসিত হয়ে যায় তাহলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে বলা যে, উমুককে গোসল দিয়েছিলাম তার মাঝে এ ধরণের দোষ দেখতে পেয়েছি, এভাবে বলা নিষেধ। কারণ এর ফলে মৃতের ওয়ারিসরা দুঃখ পায়, তাই এগুলো গিবতের অন্তর্ভুক্ত।

প্রবন্ধের লেখা উৎস: http://www.quraneralo.com/ghusl-of-deceased/




1 comment:

  1. A Simple Reminder Brother Jalal Ibn Sa'eed (Jamat…: http://youtu.be/Apn2t_gHgZc

    ReplyDelete