ইসলাম ও নারী

কেবলমাত্র ইসলামই এমন এক দীন বা জীবন ব্যবস্থা, যা নারী জাতিকে তাদের ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। তাদেরকে সমাসীন করেছে সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে। আর হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি নারীদের সকল অধিকার আদায় করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সমাজের বুকে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন। যদি আমরা ইসলাম পূর্ব আইয়্যামে জাহেলিয়াত ও ইসলাম পরবর্তী সময়ের নারীদের অবস্থা ও অবস্থানের দিকে তাকাই তাহলে বিষয়টি দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

কোরান মহিলাদেরও অন্তর্ভুক্ত করে এভাবে যেমন বিশ্বাসী মানুষ এবং বিশ্বাসী মহিলা - - সম্মানিত পুরুষ এবং সম্মানিত মহিলা.

ইসলাম সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রেও নারী- পুরুষকে সমান ঘোষণা করেছে। জন্মগতভাবে নারী-পুরুষ আল্লাহর কাছে সমান বলে, নারীকে সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে পুরুষের সমকক্ষ ঘোষণা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ঘোষণা করেছে,

O’ Men & Women! You have a common origin. [4:1]
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী (৪) সূরা আন নিসা আয়াত নং ১

“… All of you, men and women, belong to the same single stock.” [49:13]
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (৪৯) সূরা আল হুজরাত আয়াত ১৩

"Every person will be rewarded according to one's actions, male or female." [4:32]
আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না এমন সব বিষয়ে যাতে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। (৪) সূরা আন নিসা আয়াত ৩২.

স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম:

নারী-পুরুষ বালেগ হওয়ার পর উভয়েই উভয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। কিন্তু এটি যেনো তেনোভাবে না করে এজন্য ইসলাম বিবাহের মতো সুন্দর একটি বিধান দিয়েছে। আর এই বিবাহের মাধ্যমে আসলে মূলত: ইসলাম নারীদেরকেই লাভবান করেছে। দিয়েছে সম্মান ও মর্যাদার এক শীর্ষ চূড়া।

বিবাহ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا অর্থ: “তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা আরাফ, আয়াত ১৮৯)

বিবাহের মাধ্যমে মানুষ তাদের প্রাকৃতিক চাহিদা বৈধ পন্থায় পূর্ণ করে। পারিবারিক জীবনে প্রশান্তি লাভ করে। ইরশাদ হয়েছে: وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ.
অর্থ:- আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। (সুরা রূম: আয়াত ২১)

আরো ইরশাদ হয়েছে, وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً  অর্থ: “আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। (সুরা রা’দ: আয়াত ৩৮)

 অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে: هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ.  অর্থ: “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্যে পরিধেয় আর তোমরা তাদের জন্যে পরিধেয়।” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

বিবাহের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নারী পুরুষের ইজ্জত-সম্ভ্রম হিফাজত হয়। পারিবারিক শান্তি ও সুন্দর জীবন লাভ করা যায়। এছাড়াও বিবাহের মাধ্যমে সামাজিক পর্যায়ে অনেক সুফল পাওয়া যায়। এজন্যেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীর ভরু-পোষণ দিতে সক্ষম সকল যুবককে বিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:  عن عبد الله بن مسعود قال لنا رسول الله صلى الله عليه و سلم ( يا معشر الشباب من استطاع الباءة فليتزوج فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج ومن لم يستطع فعليه بالصوم فإنه له وجاء.

অর্থ: “হযরত আব্দুল−াহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রীদের ভরু-পোষণের সক্ষমতা রাখে তারা যেন বিয়ে করে ফেলে। কেনন এটা চোখের প্রশান্তি দানকারী ও লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী। আর যারা স্ত্রীদের ভরু-পোষণের সামর্থ্য রাখে না, তারা যেন রোজা রাখে, কেননা এটা তাদের উত্তেজনাকে হ্রাস করবে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭৭৮)

যুবকদেরকে বিবাহের ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য বিবাহের ফজীলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, وعن أنس قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله في النصف الباقي. অর্থ: “হযরত আনাস রা. থেকেব বর্ণিত, যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করে, তখন সে যেন তার অর্ধেক ঈমানকে পূর্ণ করে ফেললো। এখন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল−াহকে ভয় করে।” (মিশকাত শরীফ: হাদীস নং ৩০৯৭)

স্ত্রীদের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: المرأة الصالحة من السعادة
অর্থ: “উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যর পরিচায়ক।” (মুসলিম শরীফ)

বিবাহহীন বৈরাগী জীবনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,   عَنْ أَبِى أُمَامَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :্র تَزَوَّجُوا فَإِنِّى مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ وَلاَ تَكُونُوا كَرَهْبَانِيَّةِ النَّصَارَى গ্ধ (السنن الكبرى للبيهقي)
অর্থ: “আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা বিবাহ কর, কেননা আমি তোমাদের নিয়ে উম্মতের আধিক্যের উপর গর্ববোধ করব। এবং তোমরা খৃষ্টান বৈরাগ্যদের মত হয়ো না।” (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী)

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ পুরুষদেরকে নেককার স্ত্রী ও নেক সন্তান কামনা করা শিখিয়েছেন এভাবে, وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ  অর্থ: “আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে।” (সুরা ফুরক্বান, আয়াত ৭৪)

অধিক খরচের গ্যারাকলে পরে পুরুষরা যেনো বিবাহ বিমুখ না হয়, সেজন্য ইসলাম বিবাহের ক্ষেত্রে বাহুল্য খরচ বর্জনের কথা বলেছে। বাহুল্য খরচ বর্জিত বিবাহকেই সবচেয়ে বেশী বরকতপূর্ণ ও উত্তম বিবাহ বলে ঘোষণা করা হয়েছে হাদীসের মাঝে। ইরশাদ হয়েছে,  وعن عائشة قالت : قال النبي صلى الله عليه وسلم : إن أعظم النكاح بركة أيسره مؤنة " . رواهما البيهقي في شعب الإيمان

অর্থ: হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি বরকত ও কল্যাণময় বিবাহ হচ্ছে সেটি, যেখানে খরচ কম হয় (অহেতুক খরচ হয় না)।” (বায়হাকী, ঈমান অধ্যায়)

 বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষ উভয়েই নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করলেও ইসলাম নারীদের জন্য বোনাস পাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। পুরুষের উপর বিবাহের সময় স্ত্রীদের জন্য মহর দেয়া ফরজ করেছে। ঘোষণা করেছে, فَانْكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ. অর্থ: “সুতরাং তোমরা তাদেরকে তাদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে বিবাহ কর এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ২৫)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে, وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً. অর্থ: “আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ৪)

বিবাহের পর স্ত্রীদের সাথে সর্বদা সদাচারণ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে ইসলাম ঘোষণা করেছে, وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
অর্থ: “আর তোমরা তাদের সাথে সদাচারণ করো।” (সূরা নিসা: আয়াত ১৯)

নিজে ভালো খাবে, উত্তম পোষাক পড়বে আর স্ত্রীদেরকে নিম্ন মানের জীবন ধারণে বাধ্য করার জাহেলি মানসিকতাকে সমূলে বিনাশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ.  অর্থ: “তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও।” (সূরা তালাক, আয়াত ৬)

নারীর নিজের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি সন্তানের দায়িত্বও স্বামীর কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ  অর্থ: “বিত্তশালীরা যেনো সামর্থানুযায়ী স্ত্রী-সন্তানের উপর ব্যয় করে। সীমিত উপার্জনকারীরা আল্লাহর দেয়া অর্থানুপাতে ব্যয় করবে।” (সূরা তালাক, আয়াত ৭)

পুরুষদের উপর নারীদের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছে,
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِى عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكُيمٌ.
অর্থ: “নারীদের উপর যেমন তোমাদের কিছু অধিকার রয়েছে ঠিক তেমনি তোমাদের উপরও তাদের কিছু অধিকার রয়েছে। স্ত্রীর উপর পুরুষের মর্যাদা। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (সূরা বাকারা : আয়াত ২২৮)

নারীদেরকে দূর্বল ও অসহায় পেয়ে যাতে করে কেউ তাঁদের উপর জুলুম ও অত্যাচার না করে সেজন্যে ইসলাম ঘোষণা করেছে, وَلاَ تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُواْ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ.  অর্থ: “আর তোমরা স্ত্রীদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্যে আটকে রেখো না। আর যারা এ ধরণের জঘন্যতম অন্যায় করবে তারা নিজেদের উপরই জুলুম করবে।” (সূরা বাকারা : আয়াত ২৩১)

বার্ধক্যেও নারীর সম্মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম:

বার্ধক্যে নারীদের দায়িত্ব সন্তানদের উপর অর্পন করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, وَوَصَّيْنَا الإِنْسَـٰنَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً.
অর্থ: “আর আমি মানুষদেরকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি।” (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৮)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে, وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا অর্থ: “আর তুমি তাদের (তোমার পিতা-মাতার) সামনে দীনতার পক্ষপুটকে বিছিয়ে দাও। আর বলো যে, হে আমার রব! আপনি তাদের উপর রহম করুন, যেমন তারা আমার উপর বাল্যকালে রহম করেছেন। ” (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ২৪)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, وَإِن جَـٰهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِى مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلاَ تُطِعْهُمَا وَصَـٰحِبْهُمَا فِى الدُّنْيَا مَعْرُوفاً.
অর্থ: “আর তাঁরা যদি তোমাকে আমার সাথে শিরক করার এমন বিষয়ের বাধ্য করে তোমাদের কাছে যার জ্ঞান নেই, তবে (সেক্ষেত্রে) তুমি তাঁদের অনুসরণ করো না। তবে তাঁদের সাথে দুনিয়াতে সৎব্যবহার এবং সদাচারণ বজায় রাখো।” (সূরা লুকমান, আয়াত ১৫)

হাদীসের মাঝে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিতা-মাতার গুরুত্ব ও উচ্চ মর্যাদার কথা বোঝাতে গিয়ে বলেন, ان ابواب الجنة تحت اقدام الوالدين.
অর্থ: “নিশ্চয়ই জান্নাতের দরজাসমূহ পিতা-মাতার পদতলে।”- Paradise lies at the feet of your mothers: "মায়ের পায়ের নীচে বেহেস্ত"---Kashf al-Khafa', no. 1078; Al-Da'ifah, no. 593. The hadith with this wording is da'if, but its meaning is contained in the hadith of Ibn Majah and al-Nasa'i that a man came to the Prophet (may Allah bless him and grant him peace) and said, "O Messenger of Allah! I intend to go on a (military) expedition, but I have come to ask your advice." He said, "Is your mother alive?" He said, "Yes." He said, "Then stay with her, for the Garden is under her feet." This latter hadith is declared to be sahih by al-Hakim, al-Dhahabi and al-Mundhiri. --Kashf al-Khafa', no. 1078; Al-Da'ifah, no. 593.


- The best among you is the one who is best to his wife.
তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম

- O’ Men! You will be questioned about your treatment of women. " হে মানুষ তোমাদের কে জিগ্গেস করা হবে তোমরা নারীদের প্রতি কেমন আচরক করতে সে বিষয়ে

--A man came to Allah's Messenger and said: O Messenger of Allah! Who from amongst mankind warrants the best companionship from me? He replied: "Your mother." The man asked: Then who? So he replied: "Your mother". The man then asked: Then who? So the Prophet replied again: "Your mother." The man then asked: then who? So he replied: "Then your father." So this necessitates that the mother is given three times the likes of kindness and good treatment then the father. (Related by al-Bukhari (no.59710 and Muslim (7/2), from Abu Hurayrah radialliaahu'anhu )

The Prophet said, "Whoever believes in Allah and the Last Day should not hurt (trouble) his neighbor. And I advise you to take care of the women, for they are created from a rib and the most crooked portion of the rib is its upper part; if you try to straighten it, it will break, and if you leave it, it will remain crooked, so I urge you to take care of the women." (Sahih Bukhari, Volume 7, Book 62, Number 114)

অনেক নারীবাদী অভিযোগ করে ইসলাম নারীদের অধিকার হরণ করছে। সেক্ষেত্রে তারা যেসব উদাহণ দেয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ইসলামে নারীদের শস্যক্ষেত্র হিসেবে তুলনা করা হয়েছে। এখন আমি যতটুকু জানি এই শস্যক্ষেত্র কন্সেপ্টটা এসেছে প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থার প্রতীক হিসেবে। শস্যক্ষেত্র যেভাবে গাছপালা খাদ্য দ্রব্যাদি উৎপন্ন করতে পারে ঠিক তেমনই নারী সন্তান উৎপাদন করতে পারে, কন্সপ্টটা কিছুটা এরকম। এখানে অবশ্য কিছুটা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থারও ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনেহয় (প্রাচীন মিথের চরিত্র বিশ্লেষণ করে)


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, খৃস্টীয় ৬০০ শতকে এসে পুরুষতান্ত্রি সভ্যতায় ইসলাম এটাকে আসলে কিভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে? এটা কি আদি ধর্মেরই ধারাবাহিকতা রক্ষা নাকি পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় এটাকে ভিন্ন কোন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে ?  

শস্যক্ষেত্র বা এর বীজ ও দানাকে কখনোই কোন জনপদেই ভোগ্য হিসাবে দেখা হয়নি- বরং অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে দেখা হয়েছে। সে হিসাবে এটা অপরিহার্যতা ও চির কল্যাণের রূপক। আর রাসূল দ. ছিলেন অত্যন্ত মৃদুভাষী ও খুব বেশি ভদ্র আচরণকারী।

অনেক নারীবাদী অভিযোগ করে ইসলাম নারীদের অধিকার হরণ করছে। সেক্ষেত্রে তারা যেসব উদাহণ দেয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ইসলামে নারীদের শস্যক্ষেত্র হিসেবে তুলনা করা হয়েছে।

এটা হচ্ছে সুরা বাকারার ২২৩ নং আয়াত দেখুন: "তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও। "

এখানে শস্য ক্ষেত্র বলে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে আপনি যদি স্ত্রীর সাথে ভাল ব্যবহার না করেন তবে ভাল ব্যবহার ও ভাল সন্তান ও ভবিশ্যত প্রজন্ম আশা করতে পারেন না তাই কেমন পরিবার চান সেটা আপনার উপন নির্ভর করে ঠিক জমির মত ভাল ফসল পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম ও পরিচর্যা করতে হয় আর যদি তা না করেন তবে ভাল ফসল পাবেন না

আর অনেক ইংরেজি অনুবাদেও পাবেন স্ত্রী , আসলে আরবীতে আছে নিসা যার বাংলা নারী স্ত্রী নয় নারী\ মা\বৈ\ কন্যা সন্তান\কাজের মেয়ে\ সকল নারী, এখন সেই ২২৩ নং আয়াতের ব্যখ্যাটা এমন হতে পারে

"Remember that women in the society are the guardians of your future generations, just as a garden keeps the seeds and turns them into flowering plants. So, whenever you meet with women socially, treat them with respect, keeping the aforementioned principle in mind. This conduct will go a long way to insure the betterment of the future generations. Send forth good today for the sake of tomorrow. Be mindful of God and know that you will, one day, face Him. O Messenger! Give good news to the believers. [Nisaa = Women, not wives]" নেয়া হয়েছে QXPiv (THE QUR’AN AS IT EXPLAINS ITSELF (Fourth Edition)By Shabbir Ahmed, M.D. পাবেন এখানে http://ourbeacon.com/?page_id=11605

ঐ একই আয়াতে আরো বলাআছে যে" আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও। "

"আগামি দিনের ব্যবস্থা করা" মানে কি? নিশ্চই নারী\ মা\ বৈ \ কন্যা সন্তান\ কাজের মেয়ে\ সকল নারী কে তার প্রাপ্পসম্মান, মর্যাদা ও অধিকার না দিয়ে ইচ্ছামত ব্যবহার করে আগামিদিনের ভালব্যবস্থা সম্ভব নয়, আর এর পরই আল্লাহ বলেছেন "আল্লাহকে ভয় করতে থাক" কেন ভয় করবেন ? যাতে আপনি নিশ্চই নারী\ মা\ বৈ \ কন্যা সন্তান\ কাজের মেয়ে\ সকল নারীর প্রতি জুলুম করে যে পার পাবেন না আল্লাহ সেটিই বলছেন কারন তিনি এর পরেই বলেন "আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে।" তার মানে নিশ্চই এই যে আপনি আপনার বউ বা নারীদের প্রতি কেমন ব্যবহার করেছিলেন সেটা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে বা বিচার দিনেই ফয়সালা হবে.

আরো কত সুন্দর কোরআন দেখুন এর পরই আল্লাহ বলেন " আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও। " এখানে বলা হয়েছে যারা ঈমানদার তাদের জন্য সুসংবাদ কেন জানেন কারন ঈমানদারের দায়িত্ব প্রথমত তার ময়ের সেবা করা সর্বদা তারপর স্ত্রীকে সবর্দা খুশি রাখা এবং মেয়ে হলে তাকে জ্যন্ত কবর না দিবে বা অবহেলা না করে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আর সকল নারীদের সম্মান করা তাই তাদের জন্য সুসংবাদ কারন আপনি নারীদের ভাল রাখলে পরিবার ভাল হয় পরিবার থেকে সমাজ এবং সমাজ হতে দেশ ভাল হয়।

ভাবতে খুব কস্ট হয় যে কোরআনের এত সুন্দর আয়াতে যেখানে মানুষ কে নারীর প্রতি সম্মান জানানোর জন্য এভাবে বলাহয়েছে সেই আয়াতকে বিকৃত করে ইসলামেরই বিপক্ষে নারীর বিপক্ষে প্রচার করা হয়েছে আফসোস আমরা যদি কোরআনকে ভালমত বুঝতে পারতাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআন বোঝার ও সেই অনিযায়ী চলার তৈফিক দিন। আমিন।

No comments:

Post a Comment